২ বছরে বস্ত্র খাতে নতুন ১২ কোম্পানি

পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা
পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা

পুঁজিবাজারে বিগত ২ বছরে  বস্ত্র খাতে যোগ হয়েছে নতুন ১২ কোম্পানি। এর মধ্যে ৬ কোম্পানি প্রিমিয়ামসহ শেয়ার ইস্যু করেছে পুঁজিবাজারে। আর বাকী ৬ কোম্পানি অভিহিত মূল্যে টাকা তুলেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বস্ত্র খাতের ১২ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে- প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ফ্যামিলিটেক্স, আর্গন ডেনিম, হামিদ ফেব্রিক্স, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং, হা-ওয়েল টেক্সটাইল বিডি, মতিন স্পিনিং মিলস, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস, শাশা ডেনিমস, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল ও জাহিন স্পিনিং লিমিটেড।

তবে তালিকায় থাকা ৩ কোম্পানির এখনও লেনদেন শুরু হয়নি।

আলোচিত সময়ে লেনদেন শুরু করা ৪ কোম্পানির সর্বশেষ প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস কমেছে। এর মধ্যে হাওয়েল টেক্সটাইলের প্রথম প্রান্তিকে ৩৯%, তুং হাই নিটিংয়ের ১৬% এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ৩২% আয় কমেছে।

অপরদিকে এ খাতের ফ্যামিলি টেক্স তালিকাভুক্তির প্রথম বছরে লভ্যাংশ দিতে না পেরে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে যায়। তবে পরের বছর কোম্পানিটি ১০০% বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এদিকে সর্বশেষ প্রান্তিকে এই কোম্পানিরও ইপিএস কমেছে।

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের জন্যই এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। এরা কখনো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে না।

প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ২০১৩ সালে আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে ৮৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এই কোম্পানি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সাথে ১৮ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৮ টাকা মূল্যে শেয়ার ইস্যু করে বাজারে।

এর মধ্যে ৬৩ কোটি টাকা দীর্ঘময়োদি ঋণ পরিশোধ, মেয়াদি ঋণ পরিশোধে ১০ কোটি টাকা, মূলধন বাড়ানোর কাজে ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং আইপিওর কাজে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা টাকা ব্যয় করেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল।

ফ্যামিলিটেক্স আইপিওতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৩৪ কোটি টাকা টাকা সংগ্রহ করে বাজার থেকে। এই কোম্পানি আইপিওর টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, নগদ টাকার প্রবাহ বাড়ানোর কাজে ব্যয় করেছে।

ওই বছর আর্গন ডেনিমস আইপিওতে ৩৫ টাকায় শেয়ার ইস্যু করে বাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা  সংগ্রহ করে। এই কোম্পানির আইপিওর টাকা ঋণ পরিশোধ, ব্যবসা সম্প্রাসারণ ও আইপিওর কাজে ব্যয় হয়েছে।

এদিকে ২০১৪ সালে সর্বশেষ পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেড। এই কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সাথে ২৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৫ টাকা মূল্যে শেয়ার ইস্যু করেছিল বাজারে।

জানা গেছে, সংগৃহীত টাকা ঋণ পরিশোধ, ব্যবসা সম্প্রাসারণ ও আইপিওর কাজে ব্যয় হবে।

আলোচ্য সময়ে ফারইস্ট নিটিং পুঁজিবাজার থেকে ৬৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সাথে ১৭ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৭ টাকা মূল্যে শেয়ার ইস্যু করেছিল বাজারে। এই কোম্পানির আইপিওর টাকা ঋণ পরিশোধ, বিএমআরই অপারেশন এবং আইপিও কাজে ব্যয় হবে।

এছাড়া তুং হাই নিটিং ৩৫ কোটি টাকা, হা-ওয়েল টেক্সটাইল ২০ কোটি টাকা, মতিন স্পিনিং ১২৬ কোটি টাকা, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং ২৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বাজার থেকে।

অপরদিকে আইপিও প্রক্রিয়াধীন থাকা শাশা ডেনিমস ১৭৫ কোটি টাকা, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল ৪৫ কোটি টাকা এবং জাহিন স্পিনিং ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ অর্থসূচককে বলেন, কোম্পানিগুলো বাজারে আসার আগে ভালো ইপিএস দেখায়; কিন্তু তালিকাভুক্তির পরে ইপিএস কমে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ভেঙ্গে যায়। এ ধরনের কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

ইবিএল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান অর্থসূচককে বলেন, আমাদের দেশে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বেশি। তাই পুঁজিবাজারে এই কোম্পানির বিনিয়োগ বেশি হওয়া স্বাভাবিক। তবে দেশে বস্ত্র খাতের যত কোম্পানি আছে, সে তুলনায় খুব কম কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

কোম্পানিগুলোর ইপিএস কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের পরে পুনরায় বিনিয়োগ করতে সময় লাগে। এতে প্রথম বছর আয় কমে যাওয়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে প্রকৃত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুব কম। সবাই চায় ফেসভ্যালুতে শেয়ার কিনতে; কিন্তু পৃথিবীর কোথাও এই নিয়ম নেই। যেসব কোম্পানি প্রিমিয়াম নিয়ে আসছে; তাদের পারফরমেন্স ভালো বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অর্থসূচক/এসএ/