

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নিয়েছে ১০ হাজার ৫৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে পুরো অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
বিক্রি ভালো হওয়ায় ৫ মাসেই সরকার এ খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বা এক হাজার ৪৮৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি পেয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে নীট বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগ মন্দায় ব্যাংকে জমেছে প্রচুর নগদ অর্থ (তারল্য)। পাশাপাশি ঋণের সুদহার কমাতে আমানতে সুদের হার কমাতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ায় মানুষ অধিক মুনাফার আশায় ব্যাংকের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে।
এছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করমুক্ত রাখায় এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ৫ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৫ হাজার ৩৫৯ কোটি ৮১ লাখ টাকার। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানো বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার। সব কিছু বাদ দিয়ে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এর মধ্যে শুধু নভেম্বরে নীট বিনিয়োগ আছে এক হাজার ৪৬৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ব্যাংকগুলো একযোগে আমানতে সুদের হার কমানোতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের একধরনের বোঝা তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
অর্থসুচককে তিনি বলেন, শুধু বোঝা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ খাতে সরকারের সুদের হার কমানো ঠিক হবে না। সরকার এ খাতে সুদের হার কমালে সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এ খাতে সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি বিনিয়োগ করে থাকে।
উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়াতে গত বছরের মার্চ মাস থেকে সুদের হার কিছুটা বাড়িয়েছে সরকার। পরিবার, পেনশনার, তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর ও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১ শতাংশ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করমুক্ত রেখেছে সরকার।
বর্তমানে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বিদ্যমান রয়েছে।
এসএই/