‘হয় জমি ফিরিয়ে দিন, নয় মেরে ফেলান’

জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরন অনশন করছেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যরা।
জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরন অনশন করছেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যরা।

‘দুই মেয়ে নিয়ে আমরা কোথায় থাকব, আমাদের থাকার জায়গাটুকু দখল করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের থাকার জমিটুকু ফিরিয়ে দিন, নয় তো আমাদের মেরে ফেলান।’

বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসব কথা বলছিলেন সেখানে ৪ দিন ধরে অনশনরত চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস ইউনিয়নের মাহফুজা খাতুন।

গত রোববার থেকে তিনি তার স্বামী আবদুর রাজ্জাক, দুই মেয়ে বৃষ্টি খাতুন ও মিষ্টি খাতুন (৭ম ও ৪র্থ শ্রেণি) এবং শ্বশুর মো. মুক্তার আলীকে নিয়ে কাফনের কাপড় পড়ে অনশন করছেন।

পরিবারটির অভিযোগ- চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ-উজ্জামান ওরফে লিটু বিশ্বাস)  তাদের বন্দোবস্ত করা ৮ শতাংশের বসত বাড়িটি দখল করেছেন।

আবদুর রাজ্জাক জানান, ওই ৮ শতাংশ জমি ছিল খাস। বরাদ্দ পাওয়ার পর কর পরিশোধসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভূমিহীন হিসেবে সেখানে বাড়ি করে বাবা, স্ত্রী ও দুই কন্যা নিয়ে তিন বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, জমিটি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ও মূল্যবান হওয়ায় লিটু বিশ্বাস বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দিলে আমরা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই। এরপর লিটু আমার ও বাবার নামে তিনটি মিথ্যা মামলা দেন।

রাজ্জাক বলেন, মামলায় আমাদের গ্রেফতারের পরদিন লিটু বিশ্বাস দলবল নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে এবং হুমকির মুখে জোর করে ১৫০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে সই নিয়ে যায়। পরদিন তারা ঘরের মালামাল লুট করে।

তিনি জানান, ২৭ দিন পর জামিনে মুক্তি পেয়ে দেখেন, তার ভিটায় ৪ রুমের পাকা দোকান ঘর করেছেন লিটু বিশ্বাস। এই ঘটানায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট ও জজ আদালতে মামলা করেন তিনি; যা বিচারাধীন আছে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পরবর্তীতে মানবাধিকার সংস্থার পরামর্শে আমরণ অনশন করলে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্তের পর জেলা প্রশাসক অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য চিঠি দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অপসারণের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, লিটু তার ‘তৈরি ও জালিয়াতি’ স্ট্যাম্প দেখিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পিটিশন মামলা করেন। মামলার তদন্তে বন্দোবস্ত দেওয়া জমি জোর করে দখল ও অবৈধভাবে দোকান ঘর বানানোর প্রমাণও হয়।

“ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় ওই জালিয়াতি স্ট্যাম্প দেখিয়ে জেলা প্রশাসককে প্রভাবিত করে আমার বন্দোবস্ত করা জমি বাজেয়াপ্ত করার জন্য বিভিন্ন ভাবে পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে লিটু বিশ্বাস”, যোগ করেন তিনি।

সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, জমি দখল করায় অসুস্থ্ বাবা, স্ত্রী আর দুই মেয়েক নিয়ে পথে পথে থাকতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বসত ভিটায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন- এটাই কামনা।

এই বিষয়ে জানতে লিটু বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অর্থসূচককে তিনি বলেন, রাজ্জাক ৩ লাখ টাকা নিয়ে আমার কাছে এই জমি বিক্রি করে। এখন জমি হস্তান্তর ঠেকাতে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এইসব করছে সে।

খাস জেনে আপনি কেন ক্রয় করলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খাস জমি কেনায় যে আইনের এতো ফাঁকফোঁকর রয়েছে তা জানতাম না। খাস জমি কেনা-বেচা উভয় অপরাধ। জেলা প্রশাসক রাজ্জাকের বরাদ্দ বাতিল করে আমাকেও উচ্ছেদ করবে। এই বরাদ্দ বাতিল ঠেকাতেই অনশন নাটক করছেন রাজ্জাক।

এমআই/