

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের যে ফলাফল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে; তাতে ওই রাজ্যে বিজেপি ইতিহাসে সবচেয়ে ভাল ফল করে ২৫টি আসনে জিতেছে।
২৮টি আসন পেয়ে রাজ্যে একক বৃহত্তম দল হয়েছে পিডিপি, সরকার গড়তে তাদের বিজেপির সাহায্য দরকার হতে পারে।
বিবিসি বাংলা এক খবরে জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে একার শক্তিতে বিজেপি ওই রাজ্যে গরিষ্ঠতা অর্জনের যে লক্ষ্য স্থির করেছিল, কেন্দ্রের শাসক দল তার ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি। কাশ্মীর উপত্যকাতেও সব আসনেই হেরেছে তারা।
বিজেপি-র মিশ্র ফল কীসের ইঙ্গিত?
গত এক বছরে ভারতে একের পর এক রাজ্যে ক্ষমতায় আসা এবং লোকসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্যের পর ভারত-শাসিত কাশ্মীরেও বিজেপির সেই জয়ের ধারা অক্ষুণ্ন থাকবে – দল বারবার সে কথা জোর দিয়ে বলেছে। পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই সে রকমটাই ভেবেছিলেন।
মঙ্গলবার রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, বিজেপির আশা পুরোটা পূর্ণ হয়নি।
দলের জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ শুধু বলতে পারছেন, সেখানে দল অনেক উন্নতি করেছে, রাজ্য রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। দলের জন্য আরও সুখবর, শতকরা হিসেবেও সেখানে সবচেয়ে বেশি ভোট বিজেপিই পেয়েছে।
দলীয় নেতৃত্ব যতই উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলুন, ভোটের আগে তারা যে ‘মিশন ৪৪+’ অভিযান চালিয়েছেন, তা কিন্তু লক্ষ্যের অনেক দূরেই থেমে গেছে।
বিজেপি বলেছিল, ৮৭ আসনের বিধানসভায় কমপক্ষে ৪৪টি আসন জিতে তারা গরিষ্ঠতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুন্নি মুসলিম-প্রধান কাশ্মীর উপত্যকার ৪৬টি আসনে ব্যর্থতাই দলকে রাজ্যে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দিল না বলে বিবিসি জানান বিজেপি নেতা ও এমপি চন্দন মিত্র।
তিনি বলেন, ক্যাডারদের মনোবল তুঙ্গে রাখতে টার্গেটটা অনেক উঁচুতে বাঁধতে হয়। তাই দলীয় সভাপতি বারবার ফর্টি ফোর প্লাসে জোর দিয়েছিলেন।
কাশ্মীর উপত্যকায় বিজেপি এখনও বেশ দুর্বল। আর সে কারণেই জম্মুতে অসাধারণ ফল করার পরও গোটা রাজ্যে তারা ৪৪-এর আশেপাশে পৌঁছতে পারেননি বলেও স্বীকার করেন তিনি।
কোথায় মিলল না বিজেপির হিসেব?
আসলে দেশের একমাত্র মুসলিম-প্রধান রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি যে সাফল্যের নকশা তৈরি করেছিল, তাতে জোর ছিল হিন্দুপ্রধান জম্মু অঞ্চলের ৩৭টি আসন ও বৌদ্ধ ও শিয়াপ্রধান লাদাখ অঞ্চলের ৪টি আসনে।
সেই সঙ্গে উপত্যকায় ভোট বয়কট, কাশ্মীরি পন্ডিতদের ফিরিয়ে এনে ভোটার তালিকায় নাম লেখানো কিংবা সাজ্জাদ গনি লোনের মতো সাবেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেখানেও দু’চারটি আসন পেলে তা হবে বাড়তি পাওনা, এমনটাই ছিল বিজেপির অঙ্ক।
কিন্তু রাজ্যে বিপুল হারে ভোট পড়াতে সে হিসেবও পুরোটা মেলেনি এমনটাই বলছিলেন মেইনস্ট্রিম পত্রিকার সম্পাদক সুমিত চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে যে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পড়েছে সেটা বিজেপির বিরুদ্ধে যাবে বলেই অনেকে ধারণা করেছিলেন।
আসলে সংবিধানের যে ৩৭০ ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়, বিজেপি ক্ষমতায় আসলে তা বিপন্ন হতে পারে বলে কাশ্মীরীরা ভেবেছিলেন। সেই আশঙ্কাই উপত্যকার অনেক মানুষকে ভোটের বুথে টেনে এনেছিল বলে মনে করেন সুমিত চক্রবর্তী।
‘উপত্যকাতেও শক্তি বাড়াবে বিজেপি’

কিন্তু এরপরও শ্রীনগরসহ কাশ্মীর উপত্যকা আগামী দিনে বিজেপির নির্বাচনী রাডার থেকে মোটেই হারাবে না বলে দাবি করছেন চন্দন মিত্র।
ওই বিজেপি নেতা বলেন, উপত্যকাতেও আমাদের অনেক প্রার্থী ছিল, তারা না-জিতলেও ভাল লড়াই করেছেন। বাড়ি বাড়ি গেছেন এবং এই প্রথম সেখানে পাড়ায় পাড়ায় বিজেপির পতাকা উড়তে দেখা গেছে।
উপত্যকাবাসীর সঙ্গে বিজেপি-র এই প্রথম পরিচয়টা ক্রমশ আরও নিবিড় হবে এবং দলও তার সুফল পাবে বলে আশা করছেন চন্দন মিত্র-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা।
শ্রীনগরে কোন দল বা জোট শেষ পর্যন্ত সরকার গড়বে তা নির্ভর করছে অনেক জটিল সমীকরণ আর রাজনৈতিক দর কষাকষির ওপর।
সেই সরকারে বিজেপির অংশীদারি থাকুক বা না-থাকুক, দলীয় নেতৃত্ব ভবিষ্যতে তাদের কাশ্মীরের ক্ষমতায় আসায় রাস্তাই প্রশস্ত করে দেবে ২০১৪-র এই নির্বাচনী ফলাফল।
এএসএ/