হট্টগোলের মধ্যে অগ্নির এজিএম

Agni-Systems
Agni-Systems
অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)

নানা অভিযোগ আর হট্টোগোলের মধ্য দিয়ে শেষ হলো আইটি খাতের কোম্পানি অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের ১৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে এই এজিএম অনুষ্ঠিত হয়। এতে কোম্পানির চেয়ারম্যান জাবেদ বখ্ত, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, পরিচালক জিয়া শামছি, মোরশেদ সাইয়েদ, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম রাওলি এবং শতাধিক শেয়ারহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন।

এজিএমের শুরুতেই শুরু হয় বিনিয়োগকারীদের হৈচৈ। একের পর এক শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চলতি বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তারা।

অনেক কোম্পানির এজিএমের মতো অগ্নির এজিএমেও ছিল শেয়ারহোল্ডার নামধারী কিছু ‘ভাড়াটে’ লোক। তাদের জন্য প্রকৃত শেয়ারহোল্ডাররা এজিএমে স্বাভাবিকভাবে বক্তব্য রাখতে পারেনি, কোনো প্রশ্ন করতে পারেনি। কেউ ডায়াসে উঠলেই অন্যরা চিৎকার চেচামেচি শুরু করেছে। তাদের চিৎকারে কারো বক্তব্য শোনা যায়নি।

এজিএমে রেজাউল করিম নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, আগের বছর অগ্নি সিস্টেমসের পোর্টফোলিওতে বে লীজিং অ্যান্ড ইনভেস্টম্যান্ট কোম্পানির ৬৬,৫০০ ছিল।এর ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছিল ২৪ লাখ ৫২৫৩৫ টাকা। বর্তমানে ওই কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ২৯,৭২০টি।তার মানে ৩৬ হাজার ৭৮০ টি শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।শেয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ক্রয়মূল্য তথা বিনিয়োগ কমে আসার কথা।কিন্তু অর্ধেকের বেশি শেয়ার বেচে দেওয়ার পরও ক্রয়মূল্য একই সমান বা ২৪,৫২,৪৯৯ টাকা দেখানো হচ্ছে।তার মানে প্রায় ১৪ লাখ টাকা বেশি দেখানো হচ্ছে।এ টাকাটা আত্মসাৎ করা হয়ে থাকতে পারে।

তিনি বলেন, গত বছর এজিএম বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১৬,৪৬৭৯৮ টাকা। তখন ৪০০০ বিনিয়োগকারীকে ২০০ টাকা মূল্যমানের উপহার দেওয়া হয়েছিল। যার আর্থিক মূল্য ৮ লাখেরও বেশি।কিন্তু এ বছর কেনো উপহার ছাড়াই খরচ দেখানো হয়েছে ১৫১৯২৭৪ টাকা।সে হিসেবে এক্ষেত্রে প্রায় ৮ লাখ টাকার কারসাজি হয়েছে।

সেলিম নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর এজিএমের ১৪ দিন আগে বার্ষিক প্রতিবেদন পাওয়ার কথা। অথচ ৯ দিন আগে কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় এখনও প্রতিবেদন প্রিন্ট দেওয়া হয়নি।এতে বুঝা যাচ্ছে, সম্ভাব্য অসঙ্গতি ঢাকার জন্য সঠিক সময়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

এ সময় বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী অভিযোগ করেন, কোনো কারণ ছাড়াই কোম্পানির ব্যাংক ঋণ বেড়েছে।এর জন্য বেড়েছে ব্যাংক সুদও।কিন্তু কেন এই ঋণ বেড়েছে? কোন কাজের জন্য নেওয়া হয়েছে এ ঋণ?

এসময় পরিচালক জিয়া শামছি কোম্পানিতে বিভিন্ন অনিয়ম করছে এমন অভিযোগ তুলে তাকে অপসারনের দাবি জানান অনেক বিনিয়োগকারী।

তবে পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারের সংখ্যা বাড়ানো হবে কি-না এই প্রশ্ন ছাড়া আর কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেননি অগ্নির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়াম্যান।

পরিচালনা পর্ষদের শেয়ার প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, কোম্পানির অধিকাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের হাতে; তখন পরিচালনা পর্ষদের হাতে ছিল প্রায় ১২ শতাংশ শেয়ার।বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার কারণে পরিচালনা পর্ষদের হাতে এখন প্রায় ৯ শতাংশ শেয়ার আছে।তবে শিগগিরই পরিচালনা পর্ষদে এই শেয়ারের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

কোম্পানির ভবিষ্যত সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈদেশিক কল আদান-প্রদানের অপারেটর আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকা কোম্পানির নীট মুনাফা অর্জিত হবে।

এছাড়া গ্রামীণফেনের সাথে অগ্নির ওয়াইম্যাক্স ব্যবসা আছে।সেখান থেকে অর্জিত মুনাফা আগামি বছর কোম্পানিতে যোগ হবে।

এ সময় এবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।শেয়ারহোল্ডাররা এ লভ্যাংশ অনুমোদন করেন।

জেইউ/