ঐতিহ্যের সাক্ষী হারাচ্ছে বেতার

Radio

রাজধানীর শাহবাগের বাংলাদেশ বেতারের ঐতিহ্যবাহী ভবনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বেতারের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে জড়িতরা বলেছেন, অনেক ঘটনার সাক্ষী এই ভবন। অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়া হলে এর ইতিহাস এবং ঐতিহ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।

Radio
বাংলাদেশ বেতারের সদর দপ্তর।

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত দাবি করছেন, ভবনের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা করেই খালি জায়গায় অটিস্টিকদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র করার চিন্তা করা হচ্ছে।

স্বাধীন বাংলাদেশ বেতারের অন্যতম সংগঠক কামাল লোহানী বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বাঙ্গালীর সংগ্রামের ইতিহাস নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকছে। মুক্তিযুদ্ধের পর এই ভবন থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রথমবার সরাসরি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসকরা এর দখল নিয়েছিল।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ এই ভবন থেকেই সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকের নিষেধাজ্ঞায় সেদিন ভাষণ সম্প্রচার করতে না পেরে বেতারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্য সব অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাকিস্তানি শাসকের অনুমতি পাওয়ায় পরদিন সকালে ওই ভাষণ প্রচার করা হয়েছিল।

বেতারের সাবেক উপ-মহাপরিচালক আশফাকুর রহমান খান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করতে না পেরে বেতারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই প্রথম অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়েছিলেন। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এই বেতার ভবন দখলে নিয়েছিল সামরিক শাসকরা।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বেতারের পুরো কার্যক্রম শের-ই বাংলা নগরে এক জায়গায় নেওয়া হচ্ছে।

ঐতিহ্যবাহী ওই ভবনের চেয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে পুরোনো যন্ত্রপাতি সংরক্ষণের বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

Radio2
বাংলাদেশ বেতারের সদর দপ্তর।

কামাল লোহানী বলেন, শাহবাগের বেতার ভবন ও এর জমির সঙ্গে ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িত। পুরো জায়গার পরিবর্তে এর অংশবিশেষ রক্ষা করার কথা বলে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে ভবনসহ পুরো জায়গা সংরক্ষণ করা উচিত।

১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা ধ্বনি বিস্তার কেন্দ্র নামে যাত্রা শুরু করে বেতার। নাজিমউদ্দিন রোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নাজির উদ্দিনের বাড়িতে শুরু হয় এর যাত্রা। কিছুদিন পর এর নামকরণ করা হয় অল ইন্ডিয়া রেডিও।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর যথাক্রমে পাকিস্তান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস ঢাকা এবং রেডিও পাকিস্তান নামে চলে বেতার।

১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে ৩ একর জমিতে ভবন নির্মাণের পর সেখানে ২টি স্টুডিওতে যাত্রা শুরু করে বেতার। ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ বেতারের কিছু কার্যক্রম শের-ই- বাংলা নগরের নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়। তবে বেতারের সদর দপ্তর এবং মূল কার্যক্রম শাহবাগের ভবনেই ছিল। সম্প্রতি ৭৫তম বার্ষিকী পালন করেছে বাংলাদেশ বেতার।

শাহবাগে বেতার ভবনের পাশে বারডেম হাসপাতাল এবং এর বিপরীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ বেতার নামে যাত্রা শুরুর পর ভবনসহ ঐ জমি চেয়েছিল বারডেম হাসপাতাল। তবে তখন তা কার্যকর হয়নি।

সম্প্রতি বেতারের ওই জায়গার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে ওই ২টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আগে আবেদন করায় তারা জায়গাটি পেয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়।

জানা গেছে, শাহবাগের বাংলাদেশ বেতারের সদরদপ্তর ভবনসহ জমিটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দলিলও করেছে সরকার।

এমই/