‘সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমেই নির্বাচন’

  • Emad Buppy
  • May 17, 2014
  • Comments Off on ‘সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমেই নির্বাচন’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ ও অধ্যাপক রেহমান সোবহান
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ ও অধ্যাপক রেহমান সোবহান
ছবি: বাম থেকে- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ ও অধ্যাপক রেহমান সোবহান

বিএনপির উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, “গত নির্বাচনের আগে আপনাদের সংলাপে ডেকেছি, আপনারা সাড়া দেননি। এটা হয়তো আপনাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এখন আর কোনো কথা বলে লাভ নেই। অপেক্ষা করুন সময় আসলে সংলাপ কিংবা সমঝোতার মাধ্যমেই নির্বাচন হবে”।

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের কথার জবাবে এ কথা বলেন তিনি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) “রাজনৈতিক দল-বাংলাদেশের গণতন্ত্র” শীর্ষক এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, এ কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। আমরা কিছুটা গণতন্ত্র চর্চার চেষ্টা করি। প্রতি তিন বছর পর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের কমিটি পরিবর্তন করি। তবে দলীয় প্রধান গণতান্ত্রিক উপায়ে হয় না বলে স্বীকার করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সামরিক শাসনই দেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। সামরিক শাসনামলে মন্ত্রী হয়েই অনেকে রাজনীতিতে যোগদান করেছেন। এর ফলে ভালো মানুষের রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভারতের সরকার পরিবর্তন নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারতের সরকার পরিবর্তনে বিএনপির খুশি হওয়ার কিছু নেই। যেকোনো দেশের সরকারের সাথে অন্য দেশের সরকারেরই বেশি সম্পর্ক থাকে। সেখানে অন্য রাজনৈতিক দলের সুযোগ খোঁজার কোনো কিছু দেখি না।

মওদুদ আহমেদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের সংসদে দেখি না। এজন্য খারাপ লাগে। আমরা বিরোধী দলে থাকলে বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা নির্বাচিত হন। বিএনপিতে বিরোধী নেতা হলেও উপনেতা নির্বাচিত হন না, নিয়মিত সম্মেলনও হয় না আপনাদের দলে”।

এর আগে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি তোফায়েল আহমাদের উদ্দেশে বলেন, “বিএনপির বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো তুলে নিন, দেশের রাজনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। সভা-সমাবেশ করতে দিলে বিএনপি সংঘাত ও হরতালের রাজনীতি বন্ধ করে দিবে”।

সভায় মওদুদ আহমদ বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বই বাংলাদেশের রাজনীতির মূল সমস্যা। আমরা যারা গণতন্ত্রের কথা বলি তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, রাজনীতিও নেই। তাই গণতন্ত্রকে এখন ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে এখন রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছে। এর পরিণতি ভালো হবে না। যদি এভাবে চলতে থাকে সমাজে দেখা দেবে নৈরাজ্য। এছাড়া দুর্বল হয়ে পড়বে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো, উত্থান ঘটবে মৌলবাদের, বেড়ে যাবে সামাজিক সমস্যা।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনা কেবল শুরু। যদি গণতন্ত্র না ফিরে আসে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মওদুদ বলেন, একেক দেশের রাজনীতি একেকভাবে তৈরি হয়েছে মূলত নেতৃত্বের কারণে। নেতৃত্বের পার্থক্যের কারণে একেক দেশ একেকভাবে উন্নতি করেছে। আমার নিজের দলসহ রাজনৈতিক নেতৃত্ব সফল হতে পারেনি। আওয়ামী লীগের এক দলীয় শাসন না এলে সামরিক শাসন আসতো না। দুই নেত্রীরই জনপ্রিয়তা আছে, কোটি কোটি অনুসারীও রয়েছেন। কিন্তু নেই সঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।

মওদুদ আহমদ বলেন, “গণতন্ত্রের চর্চা করতে আমরা রাজি আছি কি-না, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা তৈরি করতে চাই কি-না, ত্যাগ স্বীকার করতে চাই কি-না- এসবের ওপরেই নির্ভর করছে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত”।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে আদর্শিক পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। নাহলে দু’টি দল থাকতো না। অনৈতিকতা ও মিথ্যাচার জাতীয় রাজনীতিতে অনেক আগেই চলে এসেছে। তোফায়েল আহমেদের মতো রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগে আগামি ১০ বছরে থাকবেন কি-না সন্দেহ রয়েছে। মন্ত্রী বা এমপি হলেই কি রাজনীতিবিদ হয়ে যাবেন? এর একটি সংজ্ঞা দরকার।

পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সেমিনারে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাধ্যবাধকতার কারণে এটি রাখা সম্ভব হয়নি। আর এক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষে গেলে তারা বলতো- আইনের শাসন মানা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। অথচ এটি নিয়ে কেউ জোরালোভাবে কথা বলেন না। দলের প্রধানের ওপর নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব না দিয়ে প্রত্যেকটি পদে নির্বাচনের প্রক্রিয়া থাকতে হবে। তাহলেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।

এমইউ নয়ন/এআর