প্রিন্টিং মেশিন বন্ধ, বিপাকে ব্যাংকগুলো

  • Emad Buppy
  • May 17, 2014
  • Comments Off on প্রিন্টিং মেশিন বন্ধ, বিপাকে ব্যাংকগুলো
সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস
সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস
ছবি: সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস

দেশের একমাত্র সরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের মেশিন নষ্ট থাকায় বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক। গত ১৯ মার্চ থেকে প্রিন্ট মেশিনটি নষ্ট হয়ে আছে। আর মেশিন বন্ধ থাকায় চেকসহ অনেক নিরাপত্তা সামগ্রী ছাপাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ব্যাংকের চেক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানা গেছে।

প্রিন্টিং মেশিনটি বন্ধ থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় কাজ চালিয়ে নিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, অজানা ত্রুটির কারণে গত ১৯ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের ছাপা মেশিনটি। মেশিনের ত্রুটি মেরামত করতে বিদেশ থেকে প্রকৌশলী এনেও ত্রুটি চিহ্নিত করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। ফলে মেশিনটি কবে নাগাদ সচল হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

ওই মেশিন থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ম্যাগনেটিক ইঙ্ক ক্যারেক্টার রিকগনিশন (এমআইসিআর) চেকসহ বিভিন্ন নিরাপত্তাসামগ্রী প্রিন্ট করে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক। এরই মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছে, সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৯৫ শতাংশ সিকিউরিটি সামগ্রী এ প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপানো হয়। এমআইসিআর ইনকোডেড চেক ছাপাতে অর্ডার দেওয়া হলেও গত দেড় মাসে তা সরবরাহ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বেকায়দায় পড়েছে ব্যাংকটি।

সোনালী ব্যাংকের ২৬ প্রকারের সিকিউরিটি সামগ্রী ওই প্রেস থেকে ছাপানো হয়। কিন্তু বন্ধ থাকায় অর্ডার দিয়ে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকটি। তাই বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল ব্যাংকটির পক্ষ থেকে।

সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মেশিন নষ্ট থাকায় এমআইসিআর চেকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে তাদের। গ্রাহকরা চেকের জন্য আবেদন করেলেও গত দুই মাসে তাদের কোনো চেক সরবরাহ করা হচ্ছে না। চেক না পেয়ে টাকাও উত্তোলন করতে পারছেন না এসব গ্রাহক। ফলে তারা সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলছেন বলে ব্যাংকটি জানিয়েছে।

২০০৭ সালে চেক জালিয়াতি বন্ধে এমআইসিআর চেক চালু করার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মেশিনে পাঠযোগ্য এ চেকে বিশেষ কোড দেওয়া থাকে যা নকল বা জালিয়াতি রোধে সক্ষম। সম্পূর্ণ ব্যাংকিং লেনদেনকে স্বয়ংক্রিয় করতে অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ (বিএসিএইচ)ও চালু করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের ৬টি প্রেস রয়েছে। কিন্তু সেখানে ছাপানোর ঝুঁকি থেকেই যায়। সরকারি প্রেসের কোড রিডআউট না করেই সফটওয়্যারে প্রিন্ট করা যায়। কিন্তু অন্যান্য প্রেসে ম্যানুয়ালি ওই কোড ইমপুট করতে হয়। ফলে নিরাপত্তা কোড অন্যরা জেনে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে বাইরে থেকে ছাপানো এসব নিরাপত্তা চিহ্নিত চেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো করে যাচাই করে দেবে বলে এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক দাসগুপ্ত অসীম কুমার অর্থসূচককে বলেন, মেশিনটি ২০ বছর কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়তে হয়েছে। বিদেশ থেকে কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ ইতোমধ্যে মেশিনটি সচল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় আরেকটি মেশিন কেনার জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগামি

বোর্ড মিটিংয়ে ওই প্রস্তাবনা পাস করার জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের চেকসহ নিরাপত্তা সামগ্রী অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ছাপানোর জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা চিঠি দিয়ে তাদের এ বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। বাইরে থেকে ছাপানো এসব জিনিসের নিরাপত্তা ঠিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা যাচাই বাছাই করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, এমআইসিআর হলো অত্যাধুনিক ব্যাংক উপকরণ। এ চেক ব্যবহার করার ফলে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের নামে সরবরাহ করা ব্যাংকের চেক চিহ্নিত করা যায়। আর ওই ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহ করতে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। এমআইসিআর চেকের মাধ্যমে সহজেই জানা যায়, কোন ব্রাঞ্চ থেকে কোন ব্যাংকের কোন গ্রাহককে চেকটি দেওয়া হয়েছে।

এসএই/ এআর