

অবশেষে ইতিহাস গড়লেন নরেন্দ্র মোদি। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে জয়ের পর চিরাচরিত মৌলবাদী চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে অহিংস ভারত গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন তিনি। জয়ের পর নিজ নির্বাচনী এলাকা বাদাদোরাতে এক সমাবেশ মোদি সবাইকে নিয়ে আগামির ভারত গঠনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়া টুডের।
সাধারণ চা বিক্রেতা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ মোটেও সহজ ছিল না মোদির জন্য। ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম আলোচিত এই চরিত্র তার রক্ষণশীল কর্মকাণ্ড ও মানসিকতার জন্য ঘরে বাইরে ব্যাপক সমালোচিত ছিলেন। বিশেষ করে, গুজরাটের দাঙ্গা ও অভিবাসী বাঙ্গালীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে তাকে একঘরে করে রেখছিলেন অন্যরা। তবে চার মেয়াদে গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সফলভাবে পালনের সুবাদে ভারতবাসী তাকে নিরাশ করেননি। মোদিও চাইছেন না এই আস্থাকে বিনষ্ট করতে।
আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, এখানে কোন শত্রুতা নেই, তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এবং আমরা সবাই এক জাতি।
তিনি আরও বলেন, ভারতবাসীকে আমার ওপর যে আস্থা রেখেছে আমি তার সঠিক প্রতিদান দিতে চাই। সরকারের কোন দলের নয়, কোন অঞ্চলের নয়। সবার অংশগ্রহণে সরকার সার্থক হয়।
ভারতের ভবিষ্যত সম্পর্কে মোদি বলেন, আজ থেকে ভারতে নতুন দিনের শুরু হয়েছে। এই যাত্রা আগামি পাঁচ বছর অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ জুন পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লোকসভার ১৫তম আসরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই, গত ৭ এপ্রিল থেকে লোকসভার ১৬তম আসরের নির্বাচন শুরু করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। নয় দফা ভোট অনুষ্ঠানের পর ১২ মে নির্বাচন শেষ হয় এবং ফলাফল ঘোষণা করা হয় ১৬ মে। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, সর্বোচ্চ আসন পেয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, সরকার গঠনের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে মোদির দল।
সরকারে গঠনের পর সবাইকে একসাথে নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। তিনি বলেন, সবার সাথে, সবার বিকাশে কাজ করাই আমার লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, আমি এখন আর বাদাদোরার নই, বরং সমগ্র দেশের। তাই সবাই আমার কাছে এখন সমান। আমি আমার প্রতিটা রক্তবিন্দু দিয়ে ভারতবাসীর সেবা করতে চাই।
অবশ্য ভাষণে ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত বলেননি মোদি। বিশেষ করে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক ও অভিবাসিদের ব্যাপারে কোন বক্তব্য উপস্থাপন করেননি মোদি।
তবে কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সাথে সম্পর্ক অটুট রাখার বিষয়ে ভবিষ্যৎ সরকারে জন্য কিছু প্রস্তাবনা রেখে যাবে দলটি। বিশেষ করে ইন্দো-বাংলা ও ইন্দো-চীন সম্পর্কের ব্যাপারে নতুন সরকারকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে বিদায়ী সরকার।
বাংলাদেশও আশা করছে, আগামি দিনগুলোতে ইন্দো-বাংলা সম্পর্ক আরও বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক হয়ে ওঠবে। সীমান্ত সমস্যা, পানি বন্টন ও সন্ত্রাসদমনের বিষয়ে একসাথে কাজ করার মাধ্যমে উভয় দেশের সম্পর্ক আর জোরদার হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।