সকল ধরনের কর প্রত্যাহার চায় অ্যামটব

এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তারা
এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তারা

‘অতিরিক্ত করের’ কারণে টেলিযোগাযোগ খাতের অগ্রগতি ব্যহত হচ্ছে। আর এর ফলে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পেত, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই অবস্থায় আসন্ন ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে সিমের ওপর আরোপিত সকল ধরণের কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)।

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এমন দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।

সেই সাথে মোবাইল কোম্পানির ওপর কর্পোরেট করের বোঝা কমানোর দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে মডেম ক্রয়ের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে মোবাইল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর এ মোবাইলের সিম কার্ড স্বল্প মূল্যে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে এর ওপর সকল ধরনের কর প্রত্যাহার জরুরি। জনগোষ্ঠির উল্লেখযোগ্য অংশকে এ সুবিধার আওতায় আনতে কর রেয়াত প্রয়োজন। কারণ গ্রামীণ জনপদের মানুষের ক্ষেত্রে একটি সিমের জন্য ৩০০ টাকা কর দেওয়া বেশ কঠিন। আবার কোম্পানিগুলোকে এ কর দিতে হলে তাদের আর্থিকভাবে বেশ চাপে পড়তে হয়।

বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকদের প্রত্যেককে একটি সিম ও রিম কার্ডের বিপরীতে ১০৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ টাকা মূল্য সংযোজন কর এবং ১৯০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। যার কারণে একটি সিম কার্ডের মূল্য অতিরিক্ত তিনশ টাকা আরোপিত হয়। তাই সিম কার্ডের ওপর নির্ধারিত কর প্রত্যাহার না হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মোবাইল ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যাবে।

মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে কর্পোরেট কমানো জরুরি উল্লেখ করে এশিয়ার বিভিন্ দেশের কর্পোরেট করের পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয় এই সময়। জানানো হয় এশিয়ার সকল দেশেই এ করের হার ৪০ শতাংশের নিচে নির্ধারিত। অথচ বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর্পোরেট কর দিতে হয়।

বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ৩৫ শতাংশ, ভারতে ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩০ শতাংশ এবং মালেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াতে ২৫ শতাংশ হারে এ কর দিতে হয়। তাই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে এ করের হার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি সংগঠনটির।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের কোম্পানির কর হার সাড়ে ৩২ শতাংশ হলেও মোবাইল ফোন অপারেটরদের ১০ শতাংশ বেশি হারে এ কর দিতে হয়।

এক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব তালিকাভূক্ত কোম্পানির ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও তালিকা বর্হিভূত কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে কেবল তিনটি অপারেটরকে এ কর দিতে হয়। কারণ বাকি কোম্পানিগুলো এখনো মুনাফার মুখ দেখতে পারেনি অথবা আগে মুনাফায় থাকলেও এখন লোকসান গুনছে।এ তিন কোম্পানি হচ্ছে-গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি। বাকী কোম্পানিগুলোর মূল মালিকানার সাথে শেয়ার থাকা আন্তর্জাতিক টেলিকম গ্রুপগুলো লোকসান গুনে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে সিটিসেল থেকে সিংটেল, রবি থেকে টিটিআই ডোকোমো ও এয়ারটেল থেকে ওয়ারিদ টেলিকম।

এদিকে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার প্রস্তাব করে তারা বলেন, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস সেবা খাতে নতুন সংযোজন। এ বিষয়টিকে জনপ্রিয় করা ও তার ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য এ সুবিধা দেওয়া দরকার। এ সেবার পরিধি বিস্তৃত হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে।