

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষিত ওই তরুণী একটি অনলাইন পত্রিকার স্টাফ হিসেবে কর্মরত বলে জানা গেছে।
সোমবার রাত ১১টার দিকে উদ্যানের তিন নেতার মাজারের পেছনে প্রেমিক ও তার সাত বন্ধু মিলে ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় প্রতারক প্রেমিক নাঈমসহ অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী। তবে ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।
মামলায় আসামিরা হলেন- নাঈম (প্রেমিক), শাহীন, রুবেল, ইমরান ও হাবিব। ধর্ষণকারীদের মধ্যে কয়েকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে যখন ক্যাম্পাস পরিদর্শন করছিলাম তখন তিন নেতার মাজারের পাশে এক তরুণীকে কয়েকজন ছেলে জেরা করতে দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, এ সময় তরুণীটি রিকসায় ছিল। পরে যখন আমাদের গাড়িটি রিকসার কাছে এসে দাঁড়ায় তখন ছেলেগুলো আমাকে দেখে উদ্যানের ভিতরে পালিয়ে যায়। আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও ছেলেগুলোকে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, এ থেকে বোঝা যায় ছেলেগুলো আমাকে চেনে এবং তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী।
এদিকে, শাহবাগ থানার তদন্ত কর্মকর্তা হাবিল জানান, ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িত থাকতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শরিয়তপুরের ওই তরুণী রাজধানীর হাজারীবাগে থাকতেন। গত ১০ দিন আগে তার সঙ্গে নাঈম (২৭) নামে এক তরুণের পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের পর থেকে গত কয়েকদিন ধরেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্লাস টাওয়ারের সামনে তারা দেখা করতেন।
অন্য দিনের মত গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিয়ের আশ্বাস দিয়ের ওই তরুণীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডেকে আনে নাঈম। আড্ডা আর গল্পের নামে রাত ১১টা পর্যন্ত কালক্ষেপণ করেন তিনি। পরে শাহীন, রুবেল, ইমরান ও হাবিব নামে আরও ৬/৭ যুবক নাঈমের সঙ্গে যোগ দেয়। নাঈম তাদেরকে তার বন্ধু ও বিবাহের সাক্ষ্য বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় তিন নেতার মাজারের পিছনের আনসার ক্যাম্পের পাশে ওই তরুণীকে ছুরির মুখে জিম্মি করে গণধর্ষণ করে নাঈম ও তার বন্ধুরা।
শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার জানান, ধর্ষণের পর রাত সোয়া ১২টার দিকে ওই তরুণী রিকশাযোগে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে নীলক্ষেত মোড়ে পেীঁছালে বিষয়টি দায়িত্বরত পুলিশের নজর কাড়ে। পরে তারা রিকশা থামিয়ে ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিভিন্ন তথ্য বেড়িয়ে আসে। দায়িত্বরত পুলিশ তাকে উদ্ধার করে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসে। উদ্ধারের পর তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে রাতেই ৪ প্লাটুন পুলিশ সন্দেহভাজন এলাকায় তল্লাশি চালায়। ঘন্টাব্যাপী চালানো ওই তল্লাশি শেষেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে ধর্ষিতা তরুণী বাদী হয়ে নারী ও শিশু আইনে নাঈমকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাতনামা ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার নম্বর-১৭।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, মেডিকেল পরীক্ষার জন্য তরুণীকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী অপরাধীদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।