
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতার তুলনায় বাজেটের আকার অনেক বড়- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মনে করেন রিস্ক নেওয়ার প্রয়োজন আছে। সেই সাথে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়নের ঘোষণাও দেন তিনি।
শনিবার রাতে রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই ২০১৪-১৫’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়া কোনো সমস্যা নয়। আমাদের রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়ছে। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ শতাংশ। তারপর থেকে গত পাঁচ বছর তা বেড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ বছর এ প্রবৃদ্ধি আরও অনেক বেশি হবে।
ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, আমাদের দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিখাতে তা কমে যাওয়া সত্যিই দুর্ঘটনা। দেশের মাকের্ট এখন কয়েক কোটিতে পরিণত হয়েছে। মার্কেট অনেক বড় হয়ে গেছে তাই বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ বের করা কঠিন। তবে এবারের বাজেটের পর বিনিয়োগের এ বন্ধ্যাত্ব কাটিযে ওঠা যাবে।
কৃষিখাত নিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, আমাদের কৃষি খাত অনেক দূর এগিয়েছে। এ খাতে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য একটি চমৎকার খবর। এবারের বাজেটে কৃষি ও কৃষককে বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া হবে। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্যা পায় সে বিষয়টি মাথায় রাখা হবে।
নারী উদ্যেক্তাদের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের উৎপাদন খাতে নারীদের অংশ গ্রহণ অনেক বেড়েছে। এবারের বাজেটে তাদের জন্য গত বছরের মতো একশত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে। আশা করি দেশের অর্থনীতিতে নারীরা পুরুষের সমান ভুমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক বলেন, বাজেট শুধু অংকের হিসেব নয়। উন্নয়নের লক্ষ্য ঠিক করে বাজেট করতে হবে। উচ্চাভিলাসী নয় বরং হতে হবে বাস্তবসম্মত। দেশের ব্যয়ের হিসেব ঠিক করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। বাজেট হতে হবে কর্মমুখী, অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাইলফলক, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা ফসল। বাজেটে কৃষক ও কৃষিকে আলাদাভাবে গুরুত্বারোপের প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের সবচেয়ে বড় ঘাটতি হলো ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়া। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের জন্য অবশ্যই অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি। তাই বাজেটে শুধু অবকাঠামোতে ৬০ থেকে ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দরকার। তাছাড়া ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে এ দেশ থেকে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা শেয়ার্ড বিল্ডিং এ কোনো ধরনের কাজের অর্ডার দিচ্ছে না। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ কারখানা শেয়ার্ড বিল্ডিং এ তৈরি করা।
এর বিকল্প হিসেবে কম খরচ ও নিরাপদ প্রযুক্তির ইস্পাত নির্মিত ভবন। যাতে বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে। অথচ অধিক শুল্কারোপের কারণে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিংয়ের যন্ত্রাংশ আমদানি করে এ ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এবারের বাজেটে এ দিককে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম হোসেনের সঞ্চালনে আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদেরসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নেতারা
এইউ নয়ন/ এআর