

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে নানা পণ্য রপ্তানিতে অন্যান্য দেশ থেকে অনেক বেশি শুল্ক আদায় করে দেশটি। এই শুল্কের হার উন্নত দেশগুলোর চেয়েও বেশি। অন্যদিকে জিএসপি নামের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধায় শুল্কমুক্ত কিছু পণ্য রপ্তানি করা যেতো, কিন্তু এখন সেটিও স্থগিত। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে শুল্ক হার কমানোর চেষ্টা করবে সরকার। জিএসপি ফিরে পাওয়ার চেষ্টার চেয়ে এটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে শেষ পর্যন্ত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ২০১২ সালে ইউরোপের উন্নত দেশ ফ্রান্সের পণ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক আদায় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সৌদি আরবের পণ্যে নেওয়া হয়েছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ শুল্ক। ব্রাজিলকে শুল্ক দিতে হয়েছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হারে। অথচ বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশকে দিতে হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক।
অন্যদিকে, তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশকে বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের ওপর রপ্তানি শুল্কহার ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। অথচ ভারতীয় পোশাকের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ। ভিয়েতনামকে দিতে হয় ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এমন অবস্থায় শুল্ক হার কমানোর বিষয়কে বড় অগ্রাধিকার হিসেবে ভাবছে সরকার। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়ার আশা ফিকে হয়ে আসছে। দেশটির দেওয়া শর্তাবলীর বড় অংশই পরিপালন করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নয় দেশটি। সব শর্ত পূরণ করার পরও রাজনৈতিক কারণে শেষ পর্যন্ত স্থগিত ওই সুবিধা মার্কিন সরকার পুনর্বহাল করবে না বলে সরকারের আশংকা। এমন অবস্থায় জিএসপির চেয়ে রপ্তানিতে বিদ্যমান উচ্চ শুল্কের হার কমানোর বিষয় প্রাধান্যের জায়গায় চলে এসেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অর্থসূচককে বলেছেন, আমরা জিএসপির আশা ছাড়ছি না। তবে দেশের স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে এ সুবিধা ফিরে পেতে চাই না। জিএসপি ছাড়াও আমাদের চলবে, যদি দেশটি আমাদের পণ্যে শুল্ক হার কমায়। অন্যদের চেয়ে বেশি শুল্ক দিয়ে আমাদেরকে ব্যবসা করতে হচ্ছে। এটি কমানো হলে রপ্তানি অনেক বেড়ে যাবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বাণিজ্য ফোরাম টিকফার প্রথম বৈঠকে জিএসপি পুনর্বহালের পাশাপাশি শুল্ক হার কমানোর তাগিদ দেয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশটির উপ-রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে শুল্ক হার কমানোর আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।