
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল যতটুকু হয়েছে, সমন্বয়হীনতার কারণেই তার সঠিক বণ্টন সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে একটি কার্যকরি কাঠামো থাকা দরকার বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের অভিযোগ, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেননি।
রোববার দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে অংশ নেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের প্রধান ফারা কবির, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন ড. হামিদা হোসেন, বিল্ডসের সহকারী পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমেদ, শিরিন আক্তার, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ফায়ার সার্ভিসের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান প্রমুখ।
অ্যাকশন এইডের আয়োজনে ওই সংলাপে সংস্থাটির এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, গত ১২ মাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৫টি পরিবার তাদের আয়ের উৎস খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
জরিপের বরাত দিয়ে জানানো হয়, এখনও ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক নিত্যপ্রয়োজন নিয়ে সমস্যা মোকাবিলা করছে। ২৬ শতাংশ শ্রমিক কিছু সমস্যায় ভুগছে, ৪ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিক নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়।
জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে আরো জানানো হয়, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবারগুলোর দাবি এই মুহূর্তে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫ টাকা। তবে কোনো পরিবারের জন্য দরকার ৬ লাখ টাকা।
জরিপে দেখা গেছে ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ নিহত শ্রমিকের প্রতিনিধিরা এক থেকে ৫ লাখ টাকা এই মুহূর্তে দাবি করেছে।
কেউ কেউ ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছে বলে অ্যাকশন এইডে জরিপে বলা হয়।
সংলাপে অংশ নেওয়া আইন সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন ড. হামিদা হাসান বলেন, তহবিলে কী পরিমাণ টাকা জমা হয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত। তহবিলে কতো টাকা জমা হলো, আর কতো টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হলো- তা স্বচ্ছ থাকা দরকার।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা জমা পড়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিককে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২২ কোটি টাকা।
সিপিডি অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পূরণের হিসেবে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা ছিল বিক্ষিপ্ত। বিক্ষিপ্ত এ প্রচেষ্টাগুলোর সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তার মতে, ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনমান উন্নয়নে পুনর্বাসনের জন্য একটি কার্যকরি কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।
রানা প্লাজা এগ্রিমেন্ট সমন্বয় কমিটি নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাবা কাজিজি বলেন, রানা প্লাজা ক্ষতিগ্রস্ত তহবিল থেকে শ্রমিকদের ক্ষতিপুরণ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সব সদস্যদের জন্য একটিকরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার কথা বলেন। যাতে ক্ষতিপূরণ সবাই পেতে পারে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধি শ্রীনিবাস রেড্ডি বলেন, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছে। যেখানে আইএলও, ক্রেতারা-সহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী অংশ নিচ্ছে। তবে, একে আরও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্পে যদি দীর্ঘমেয়াদে পরিবর্তন আনতে হয় তবে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আইএলও শ্রমিকদের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার কাজে আগ্রহী। তাই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় শিল্পের পরিবর্তন আনতে কাজ চলতে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ইতোমধ্যে ২৫ শতাংশ কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এক বছরের মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি কারখানা পরিদর্শন এই খাতে নেওয়া একটা বড় ধরনের পদক্ষেপ বলে মনে করেন তিনি।
এইউএম/টিআর/এআর