
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিনিময় প্রথা ও ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা।
আজ মঙ্গলবার উপজেলার কুলিকুণ্ডা গ্রামে শত শত কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিনিময়ে বিভিন্ন রকমের শুঁটকি কিনতে জড়ো হন এই মেলায়।
শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখী এই মেলার আয়োজন করে থাকেন এলাকাবাসী। ব্যতিক্রমধর্মী এই মেলার প্রধান আকর্ষণ শুঁটকি। মেলায় নানা জাতের শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসেন ভোজন রসিকরাও। শুঁটকি ছাড়াও এই মেলার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে “বিনিময় প্রথা” অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য বিক্রি। মঙ্গলবার ভোরে এই মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে বিনিময়ের মাধ্যমে শুঁটকি বিক্রি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শত বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিতভাবেই বসছে এই মেলা। তাই ধারণা করা হয়, মেলাটি আদি কাল থেকেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলায় এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু, ডাল, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা জাতের পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কিনে থাকেন। মেলায় বোয়াল, শোল, গজার, বাইম, পুঁটি, টেংরাসহ নানা জাতের শুঁটকি পাওয়া যায়। তবে দেশি মাছের শুঁটকির প্রাধান্যই বেশি। এছাড়াও ইলিশ, কারফুসহ বিভিন্ন জাতের মাছের ডিমও বিক্রি হয় এখানে। বাহারি রকম শুঁটকির আকর্ষণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোজন রসিকরা এসে ভীড় করেন মেলায়। পছন্দের শুঁটকি কিনতে পেরে তারাও আনন্দিত হন।
এই মেলায় নাসিরনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ব্যবসায়ীরা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন তাদের উৎপাদিত শুঁটকি নিয়ে। একদিনেই বিক্রি হয় লাখ লাখ টাকার শুঁটকি। মেলায় কোনো আয়োজক কমিটি না থাকলেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছে মেলা। শুঁটকি বিক্রির লাখ লাখ টাকা নিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পেরে ব্যবসায়ীরাও আনন্দিত।
এছাড়াও মেলায় গৃহস্থালির সামগ্রীসহ শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি হয়। যুগ যুগ ধরে চলা এ মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনা-বেচা করে থাকেন। তবে মেলাকে কেন্দ্র করে জুয়াড়িদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
একই দিনে উপজেলা সদরের লঙ্গণ নদীর তীরেও বসেছে “বিনিময় প্রথা” অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য মেলা। মঙ্গলবার ভোরে এই মেলা শুরু হওয়ার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রি। এছাড়াও এ মেলায় বিক্রি হয় স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলস, ঝাঁঝর, থালা, ঘটি, বদনা, বাটি, পুতুল ও প্রদীপসহ অন্যান্য সামগ্রী। যা কিনা খুব সহজেই মেলায় আসা মানুষের নজর কাড়ে। গ্রামের মেয়েদের টাকা-পয়সা জমানোর জন্য নানা ডিজাইনের মাটির ব্যাংকও বিক্রি হয় এই মেলায়।
এমআর/এআর