
পঞ্জিকার আবর্তনে আজ পয়লা বৈশাখ মানে বছরের প্রথম দিন। নতুন-পুরোনো-আগামি সব বছরই নির্ধারণ করে দেয় এই পঞ্জিকা। পঞ্জিকা অনুসারে জন্ম-মৃত্যু-বয়স নির্ধারিত হয়। এমনকি মানুষের জীবনও নাকি পঞ্জিকায় আবদ্ধ। অবশ্য সভ্যতার বিবর্তনে এবং কাজের সুবিধার্থে মানুষই পঞ্জিকাকে জীবনের সাথে একীভূত করে নিয়েছে। সূর্য এবং চাঁদের আবর্তন অনুসারে পৃথিবীজুড়ে নানা ধরনের পঞ্জিকা প্রচলিত রয়েছে। তাই বাংলা বছরের সূচনালগ্নে অর্থসূচকের এবারের আয়োজন ‘পঞ্জিকার পাঁচকাহন’ :
পঞ্জিকার ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। তবে এর শুরুটা এখনো পর্যন্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। প্রাচীন পঞ্জিকাগুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হল সুমেরু এবং মায়া পঞ্জিকা।
খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে সুমেরু (বর্তমান ইরাক) অঞ্চলে সুমেরু পঞ্জিকার প্রচলন ছিল। সৌর এবং চন্দ্রের আবর্তনের সমন্বয়ে এই পঞ্জিকা তৈরি করা হয়েছিল। সুমেরু পঞ্জিকায় মাসের সংখ্যা ছিল বারটি।
প্রাচীন পঞ্জিকাগুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হল মায়া পঞ্জিকা। মায়ানদের আজগবি সব কর্মকাণ্ডের জন্য এই একুশ শতকেও তাদের নিয়ে কৌতুহলের অন্ত নেই। এইতো কিছুদিন আগে মায়া পঞ্জিকার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওইদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু, ভাগ্য ভালো সে ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটেনি।
আর আধুনিক পঞ্জিকার মধ্যে অন্যতম হল গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা, হিজরী পঞ্জিকা এবং বাংলা পঞ্জিকা।
গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পঞ্জিকা। ইউরোপীয়দের বদৌলতে এই পঞ্জিকা পুরো পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। আমাদের দেশে অনুসৃত ইংরেজী পঞ্জিকা মূলত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। গ্রেগর নামে যাজক সূর্যের আবর্তন অনুসারে এই পঞ্জিকা প্রবর্তন করেছিলেন বলেই এর নাম গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার।
মহানবীর(সঃ) এর মক্কায় হিজরতের দিন থেকে হিজরী পঞ্জিকার দিন গণণা শুরু হয়। তবে দ্বিতীয় খলিফা উমরের(রাঃ) শাসনামলে এর প্রচলন শুরু হয়। অভিবাসী শাসকদের হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশেও এই পঞ্জিকা ঢুকে পড়ে। চন্দ্রের আবর্তন অনুসারে এই পঞ্জিকার দিন গণণা করা হয়। তাই প্রচলিত সৌর পঞ্জিকার সাথে এই পঞ্জিকার বেশ-কিছু পার্থক্য রয়েছে।
বাংলা পঞ্জিকা মূলত সৌর পুঞ্জিকা। প্রচলিত আছে, গৌড়ের রাজের শশাঙ্ক বাংলা সনের প্রচলন ঘটান। তবে, মোঘল সম্রাট আকবরের হাত ধরে এর বিস্তৃতি ঘটে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জির মধ্য দিয়ে এই পঞ্জিকা আজও বঙ্গদেশে প্রচলিত আছে। তবে, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এর তেমন প্রভাব না থাকলেও পয়লা বৈশাখ এবং এই অঞ্চলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই পঞ্জিকা বাঙ্গালীরদের মাঝে আরও অনেক বছরর ঠিকে থাকবে। জাতি হিসেবে আমরা সংহতি খুব দৃঢ় না হলেও জাতি গঠনের বুনিয়াদ হিসেবে বাংলা পঞ্জিকা ইতোমধ্যেই তার সম্ভাবনা প্রমাণ করেছে। তাই বাংলা পঞ্জিকার তলেই হয়তো আমাদের ভবিষ্যতের জয়যাত্রা শুরু হবে এমনটি অসম্ভব নয়।