
তৃতীয় দফার রাজশাহীর তানোর, পুঠিয়া ও বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমূখর পরিবেশে রোববার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ চলছে। বিরতীহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলবে। আজ সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের বেশ উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এ উপস্থিতির হার আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে, এ তিন উপজেলার ১৯৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৬১টি কেন্দ্র। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। এরই মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিন উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পাঁচ দিনের জন্য সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছে সেনা ও বিজিবি সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এড়াতে এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সেনা ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে তারা। এছাড়া, নির্বাচনী আচরণ বিধি দেখভালের জন্য প্রতি উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে শনিবার থেকে আরও তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আরও চারটি করে ভ্রাম্যমাণ দল কাজ শুরু করবে। এ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে, জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ওই তিন উপজেলার ১৯৪টি ভোট কেন্দ্রকে ঘিরে এরই মধ্যে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৬১টি কেন্দ্রকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে তানোরের ৫১টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৬টি, পুঠিয়ার ৫৯টি ভোট কেন্দ্রর মধ্যে ১৮টি এবং বাগমারার ৮৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৭টি।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রাজশাহীর এ তিন উপজেলায় মোট ভোটার ৫ লাখ ২৭ হাজার ৪৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩০ হাজার ২০৭ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৯ জন। মোট ১৯৪টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ তিন উপজেলায় মোট ভোট কক্ষ রয়েছে ৯৮৮টি। নির্বাচনে ১৯৪ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ওই সব কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন। থাকছেন ৯৮৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ২ হাজার ১৭৬ জন পোলিং অফিসার।
তানোরে চেয়ারম্যান পদে ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী মুন্ডুুমালা পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী (আনারস) এবং ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমরান আলী মোল্লা (মোটরসাইকেল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী জামায়াত নেতা বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম মোল্লা (চশমা) ও ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম (তালা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে উভয় জোটের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী বিএনপি নেত্রী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বন্দনা রাণী (ফ্যান), ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেত্রী সোনিয়া সরদার (কলস), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুব মহিলা লীগের জেলা সম্পাদক মোস্তারী জাহান লাভলী (হাঁস), ফরিদা বিবি (সেলাই মেশিন), আওয়ামী লীগ নেত্রী সমিরন কিস্কু (ফুটবল) ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী স্থানীয় নেত্রী মমেনা আহমেদ (প্রজাপতি) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তানোরে মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬২ হাজার ১৭৫ জন ও নারী ভোটার ৬৬ হাজার ৫৫৩ জন। ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অপরদিকে, বাগমারায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত জাকিরুল ইসলাম সান্টু (ঘোড়া), বিএনপি সমর্থিত মকলেসুর রহমান মল (মোটরসাইকেল), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ডিএম জিয়াউর রহমান (দোয়াত-কলম) এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুস সোবহান চৌধুরী (আনারস)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত শহিদুল ইসলাম (তালা) এবং ১৯ দল সমর্থিত জামায়াত নেতা সরদার মোহাম্মদ রেজাউল করিম (চশমা)।
এছাড়া নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাসিমা আক্তার (প্রজাপতি) ও জামায়াত সমর্থিত রেজিয়া খাতুন (হাঁস)।
এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪ হাজার ৬০৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫৮ জন।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ছয়জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন।
উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আহসানুল হক মাসুদ (দোয়াত কলম)। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে এ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন শাহরিয়ার রহিম কনক (মোটরসাইকেল) ও মর্জিনা বেগম সরি (উড়োজাহাজ)। ১৯ দল থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন বিএনপির আল-মামুন খান (আনারস) ও বিদ্রোহী আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মা (ঘোড়া)। এ আসনে জাতীয় পাটির একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনসার আলী (কাপ পিরিচ) মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলেন আবদুল হান্নান (বই), জামায়াত নেতা আহমাদ উল¬াহ (তালা) ও বিদ্রোহী প্রার্থী ওয়াসিম আলী (টিউবওয়েল)।
এছাড়া নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মতিয়া হক (প্রজাপতি) ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকলিমা বেগম (কলস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ উপজেলায় ৫৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এরমধ্যে নির্বাচন অফিস ১৮টি ভোটকেন্দ্র্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উপজেলার এক লাখ ৪৫ হাজার ১৯০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ৭২ হাজার ৯৯৮ জন পুরুষ ও ৭২ হাজার ১৯২ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
এমআই/এএস