আড়াই মাসে ৬ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন

ছয় কোম্পানি

ছয় কোম্পানিপুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা না কাটলেও থেমে নেই প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ছয়টি কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে  বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারকে বড় করার জন্য নতুন নতুন কোম্পানিকে বাজারে  তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে অবশ্যই কোম্পানির মান যাচাই বাছাই করে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত।

আবার এক সাথে বেশি কোম্পানি আইপিওতে আসলে বাজারে তারল্য সংকটের আশঙ্কা করছেন তারা। কারণ এই সময় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে টাকা তুলে নিয়ে আইপিওর দিকে ঝোঁকে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী অর্থসূচককে বলেন, দেশের পুঁজিবাজারকে প্রসারিত করার জন্য নতুন কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে একসাথে বেশি কোম্পানি আইপিওতে আসা ঠিক নয়।

সেকেন্ডারি মার্কেটকে বড় করার জন্য মানসম্মত কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত বলেও মনে করেন ডিএসইর এই পরিচালক।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়,  আইপিও অনুমোদন পাওয়া কোম্পানির তালিকায় রয়েছে, ফার ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, পেনিনসুলা চিটাগং লিমিটেড, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড এবং খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড কোম্পানি।

জানা যায়, ২১ জানুয়ারি কমিশনের ৫০৬তম সভায় ফার ক্যামিকেলের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ১ কোটি ২০ লাখ শেয়ার বাজারে ছাড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে কোম্পানিটি বাজার থেকে ১২ কোটি  টাকা সংগ্রহ করবে। আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থে কোম্পানিটি মূলধন বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানোর কাজে ব্যয় করা হবে।

৩১ মার্চ ২০১৩  সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এই কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে পাঁচ টাকা এক পয়সা এবং শেয়ার প্রতি সম্পদ বা এনএভি ১৫ টাকা ৫৫ পয়সা।

বিএসইসির ৫০৭ তম সভায় পেনিনসুলা চিটাগং লিমিটেডের আইপিও’র অনুমোদন দেওয়া হয়।

কোম্পানিটি ২০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩০ টাকা মূল্যে ৫ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে। এর মাধ্যমে তারা বাজার থেকে ১৬৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

২০১৩ সালের প্রথম দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন ২০১৩) পেনিনসুলা চিটাগং লিমিটেডের শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৪৯ পয়সা। গত বছরের ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ বা এনএভি দাঁড়ায় ৩২ টাকা ৭৩ পয়সা।

শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের  আইপিও  অনুমোদন দেওয়া হয় কমিশনের ৫০৫ তম সভায় ।

জানা যায়,  ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৫ টাকা মূল্যের শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিটি ১ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার বাজারে ইস্যু করবে।  এর মাধ্যমে  তারা বাজার থেকে ৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা সংগ্রহ করবে। আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থে কোম্পানিটি ব্যাংক লোন পরিশোধ করবে।

৩১ মার্চ ২০১৩  সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এই কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৩২ পয়সা এবং  এনএভি ২৪ টাকা ৫৮ পয়সা।

তুং হাই নিটিংয়ের আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয় কমিশনের ৫১০তম সভায় । প্রিমিয়ামবিহীন ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের তিন কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে কোম্পানিটি। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজার থেকে ৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

সংগৃহীত টাকা চলতি মূলধন , মেশিনারিজ ক্রয় এবং টার্ম ঋণ পরিশোধ ও আইপিওর কাজে ব্যয় করবে কোম্পানি।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে এক টাকা ১৫ পয়সা এবং শেয়ার প্রতি সম্পদ বা এনএভি ১৩ টাকা ৭৩ পয়সা।

খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের এর আইপিও’র অনুমোদন দেওয়া হয় কমিশনের ৫১২তম সভায় ।প্রিমিয়ামবিহীন  ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের চার কোটি শেয়ার ইস্যু করবে কোম্পানিটি। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজার থেকে ৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

সংগ্রহীত টাকা চলতি মূলধন , টার্ম ঋণ পরিশোধ ও আইপিওর কাজে ব্যয় করবে কোম্পানি।

৩০শে জুন ২০১৩ সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৮২ পয়সা এবং শেয়ার প্রতি সম্পদ বা এনএভি ২৪ টাকা ২৬ পয়সা।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওতে আসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডকে। এই পদ্ধতিতে কোম্পানিটি যে দামে শেয়ার বিডিং করবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে সেই একই দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছেও শেয়ার ছাড়বে কোম্পানিটি।

নিয়ম অনুসারে, ইতোমধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রির জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির  প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে নির্দেশক মূল্য ঠিক করা হয়েছে। কোম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের নির্দেশক মূল্য ঠিক হয়েছে ৬০ টাকা। নিলামে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ২০ শতাংশ কম বা বেশি পর্যন্ত দর প্রস্তাব করতে পারবে। এ হিসেবে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর উঠতে পারে ৭২ টাকা। আর সর্বনিম্ন দর ৪৮ টাকা।

জানা যায়, কোম্পানিটিকে ৬০ টাকা দরে  তিন কোটি ৩০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১৯৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ টাকার মাধ্যমে কোম্পানিটি দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ পরিশোধ, চলতি মূলধনের সংস্থান এবং আইপিওর খরচ নির্বাহ করবে।

৩১ ডিসেম্বর ২০১২ সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ১০ টাকা ২১ পয়সা ।