
অহিংস রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। পরম শ্রদ্ধায় নানা ধর্মীয় আয়োজনে দিনটি পালন করছে ভৈরববাসী।
ভৈরববাসী আজো তার কথা মনে করে চোখের জল ফেলেন। জিল্লুর রহমান ভৈরবের মাটি ও মানুষের সাথে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েও জন্মস্থান ভৈরবের কথা এক মূহুর্তের জন্যও ভুলেননি। তাই ভৈরবের উন্নয়নে তার ছিল আলাদা দৃষ্টি। ভৈরবকে জেলায় উন্নীত করার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের দাবির সাথে তিনিও একাত্মতা পোষণ করতেন।
শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও জন্মস্থান ভৈরবকে জেলায় রূপান্তরিত করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। ভৈরবের এক অনুষ্ঠানে তিনি ওই ইচ্ছার কথা জানান। এরপর মাঝখানে কেটে যায় কয়েকটা বছর। জিল্লুর রহমান আবারও ফিরে আসেন তাঁর জন্মস্থান ভৈরবে। তবে জীবিত নন, মৃত। যে মাঠে তাঁর জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন, সে মাঠেই অনুষ্ঠিত হয় তাঁর নামাজে জানাজা। পেছনে পরে থাকে তাঁর জন্মস্থানকে জেলায় রূপান্তরিত না করতে পারার বেদনা। সেই বেদনা এখন ভৈরবের প্রতিটি মানুষকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। একই বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন জিল্লুর রহমানের একমাত্র ছেলে, স্থানীয় সাংসদ নাজমুল হাসানও। তিনিও অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁর বাবার শেষ ইচ্ছা ভৈরব জেলা বাস্তবায়নের।
১৯২৯ সালের ৯ মার্চ ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর গ্রামে জন্মেছিলেন এই মহান নেতা। তাঁর পিতার নাম মরহুম মেহের আলী মিয়া। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী। অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডেও সদস্য এবং লোকাল বোর্ডেও চেয়ারম্যান। মাতা বাচ্চু বিবি ছিলেন গৃহিনী।
মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। সে সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের জিএস ছিলেন। ছাত্রজীবনেই ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন তিনি আইভি রহমানের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। দেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম ও ক্রান্তিলগ্নে তাঁর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। দলমত নির্বিশেষে তিনি সকলের কাছে সমভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। আর তাই কিশোরগঞ্জের ভৈরব-কুলিয়ারচর আসন থেকে তিনি ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচত হন।
জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে ভৈরবে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে,তা সহজে পূরণ হবার নয়। এলাকাবাসীর মতো এমনটাই মনে করেন তার ছেলে সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন। তাঁর বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল ভৈরবকে জেলায় উন্নীত করা। সে সময় প্রধানমন্ত্রীও তাঁর ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মন্ত্রিসভায় বিষয়টি অনুমোদন করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক, প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন কারণে বিষয়টি থেমে আছে। জিল্লুর রহমানের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ভৈরব জেলায় উন্নীত হবে-এমনটাই প্রত্যাশা করেন ভৈরববাসী।
কেএফ