কৃষিঋণ বিতরণে শূন্যের কোটায় নতুন আট ব্যাংক

agri loan disbusrsment

agri loan disbusrsmentবিনিয়োগ না বাড়লেও চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় বেড়েছে। দেশে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে গত আট মাসে কৃষি খাতে প্রায় ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বা ৬৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় আট  হাজার ৭শ কোটি টাকা।

এক বছরের ব্যবধানে কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় এক হাজার ৩২২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ। অপরদিকে একই সময়ে কৃষিঋণ আদায় হয়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ। যা গত বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৬০ শতাংশ। তবে নয়টি নতুন ব্যাংকের মধ্যে আটটি ব্যাংক এখনো কোনো কৃষিঋণ বিতরণ করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে তা জানা গেছে।

 এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভূক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক অর্থসূচককে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রথম দিকে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণে কিছুটা প্রভাব পড়লেও গত আট মাসে যে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে এবং ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি তা সন্তোষজনক। এখনো আটটি নতুন ব্যাংক ঋণ বিতরণ না করলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যে সব বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করতে পারেনি তাদের তাগিদ দেয়ার জন্য ওই সব ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট নির্বাহীদের নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করা হয়েছে। তারা লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করতে সক্ষম হবেন বলে বৈঠকে প্রতিশ্রতি দেন। এ ব্যাপারে গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, এখনো যে সব ব্যাংক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণে পিছিয়ে আছে বা আদৌ কোনো কৃষিঋণ বিতরণ করেনি তাদের নতুন শাখার অনুমোদন দেয়া হবে না।

সূত্র মতে, গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণ করে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি ১০৪ শতাংশ । ফলে চলতি অর্থবছরে ৫৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও চলতি বছরের প্রথম থেকেই এ ঋণ বাড়তে শুরু করে। যা গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গত আট মাসে বিতরণকৃত ঋণের পরিমান হচ্ছে ১০ হাজার ১০৭ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছিল আট হাজার ৭৮৬ দশমিক ০৫ কোটি টাকা বা ৬২  দশমিক ১৮ শতাংশ।

 প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ফসল উৎপাদন খাতে চার হাজার ৬০৬ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা। এরপর দারিদ্র্য বিমোচনে এক হাজার ২২২ দশমিক ২৮ কোটি টাকা, প্রাণিসম্পদ ও পোলট্রি খাতে ১ হাজার ১৬৩ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা এবং মৎস্য খাতে ৮১৫ দশমিক ৪০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।

আট মাসে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ করেছে ছয় হাজার ৪৯৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা বা ৭৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। যা আগের বছরে ঋণ বিতরণ করেছিল পাঁচ হাজার ১৩৮ দশমিক ৯২ কোটি টাকা বা ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিদেশি ব্যাংকগুলো মিলে ঋণ বিতরণ করেছে তিন হাজার ৬১৩ দশমিক ০৫ কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগের বছরের করেছিল  তিন হাজার ৬৪৭ দশমিক ১৩ কোটি টাকা বা ৬৬ দশমিক ০৪ শতাংশ।

বরাবরের মতো চলতি অর্থবছরের গত আট মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ হলো তিন হাজার ৭৬০ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা বা ৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এরপরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ৮৪৮ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর কম ঋণ দিয়েছে রুপালী ব্যাংক ৫৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা বা ৩৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ।

 বেসরকারি ৩৮টি ব্যাংক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ করেছে তিন হাজার ৩৫২ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে রবাররের মতো ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ৯৭৭ দশমিক  দশমিক ২৭ কোটি  টাকা বা ১২৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে গত বছরে অনুমোদন পাওয়া নয়টি ব্যাংকের মধ্যে আটটি ব্যাংক গত মাস পর্যন্ত কৃষিখাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।এই ব্যাংকগুলো হলো ফারমার্স ব্যাংক, মেঘনা, মিডল্যান্ড, মধুমতি, এরআরবি, এনআরবি কমার্সিয়াল এবং সাউথ বাংলা ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি নয়টি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান , স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক এখনো কোনো কৃষিঋণ বিতরণ করেনি। বাকি ছয়টি ব্যাংক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ করেছে ২৬০ দশমিক ১৯ কোটি টাকা বা ৬০ দশমিক ০৯ শতাংশ।

 এসএই/