সরকারের সুনজরে আইডিআরএ

আইডিআরএ

IDRAবিমা খাতে স্থিরতায় ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সেভাবে কার্যকর কোনো ভুমিকা রাখতে পারেনি সংস্থাটি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব,কম জনবল,আইনী স্বচ্ছতা আর এখনও পর্যন্ত সংস্থাটির কোনো অর্গানোগ্রাম তৈরি না হওয়ায় কারণেই কার্যকর কোনো কিছু করতে পারেনি বলেই সংশ্লিষ্টদের মত।

তবে প্রতিষ্ঠার  দুই বছর হয়ে যাওয়ার পরে সরকারি সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার তুলানায় এ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। এর ফলে অনে কর্মকর্তা ইতোমধ্যে চাকুরি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন।’

তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন,  সংস্থাটির নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ হওয়ায় এটি এখন অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

উল্লেখ্য গত ৪ মার্চ সংস্থাটির নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন কুদ্দুস খান। এর আগে সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসাবে এম শেফাক আহমেদের মেয়াদ শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন ফজলুল করিম। সরকার  তার পরিবর্তে সংস্থার সদস্য হিসেবে সম্প্রতি যোগ দেওয়া কুদ্দুস খানকে এ দায়িত্ব দিয়েছে। গত বুধবার থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনও শুরু করেছেন।

এদিকে আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, বিমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য যে লোকবল দরকার সে সঙ্কট দূর করতে ১৯৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা করে এর সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) চূড়ান্ত করে ২০১১ সালে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইডিআরএ। পরবর্তী সময়ে অর্থমন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। গত বছরের ২৬ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৯৪ জন লোকবলসংবলিত অর্গানোগ্রাম অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় তা চূড়ান্ত করতে আইডিআরএ পাঠায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা অনুমোদন করা হয়নি।

তবে সূত্রটি জানিয়েছে নতুন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় খুব শিগগিরই এ সংকটরে নিরসন করবে।

এর আগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ফজলুল করিম জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেন। তার আলোকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি ইস্যু করেন বর্তমান চেয়ারম্যান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন আইডিআরএ জন্য অস্থায়ীভাবে রাজস্ব খাতে ১৯৫ জনবলের জন্য পদ সৃজনের প্রস্তাবের বিপরীতে ৯৪ জনবল নিয়োগের জন্য অস্থায়ীভাবে রাজস্ব খাতে পদ সৃজনে এবং যানবাহন ও সরঞ্জাম টিওএন্ডই ভুক্তকরণে শর্তসাপেক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর আগে সম্মতি দিয়েছিল, তা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালনায় আপতত যথেষ্ট। তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজনবোধে সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

জানা গেছে, এ আবেদনের প্রক্ষিতে গত ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি আইডিআরের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে  জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ সম্পর্কে সোনালী লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত চন্দ্র আইচ অর্থসূচককে বলেন, বিমা শিল্পের প্রধান সমস্যা হলো যোগ্য জনবল নেই। যার ফরে কোম্পানিগুলোর টার্গেট অর্জন করাটা কঠিন হয়ে যায়। একই অবস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তারা যে কোম্পানিগুলোকে মনিটরিং করবে তাদের ওই পরিমাণ জনবল নেই।

তবে অজিত চন্দ্র আইচ আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক দিন পর হলেও সরকার তিন জন নতুম সদস্যসহ মোটি চার জন সদস্য দিয়েছে আইডিআরএকে। আমার বিশ্বাস ওনারা চার জন মিলে এ খাতকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ২৮ বছরে আগের বিমা শিল্পের অবস্থা আর এখনকার অবস্থা কিন্তু এক নয়। আমাদের দেশে আগের তুলনায় বিমার পরিচিতি বাড়ছে। কিন্তু সে হিসাবে যোগ্য জনবল বাড়ছে না। এ জন্য এ শিল্প দির গতীতে এগুচ্ছে। তবে আশার কথা হলো এ দেশের বিমা শিল্পের ভবিষৎ উজ্বল।

এদিকে, অবহেলিত এই খাতটিতে শৃংখলা আনতে প্রথম বারের মতো প্রণয়ন করা হয়েছে ‘বিমা নীতি-২০১৩।’ বিমা কোম্পানির দূর্বল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ সাংগঠনিক কাঠামো, বিমা পলিসির বিদ্যমান উচ্চ প্রিমিয়াম রেট এবং পেশাগত বিমা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ না থাকা, বিমা কোম্পানির কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের অভাব, কোম্পানিগুলোর আ্যাকচ্যুয়ারি না থাকার ব্যগ পোহাতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।

এদিকে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে সরকার এই খাতটির উন্নয়নে এবং এর দেশজ উৎপাদনে এর ভুমিকা বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

জিডিপিতে বিমাখাতের অবদান রাখতে চায় সরকার: ২০২১ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে বিমাখাতের অবদান পাঁচ শতাংশ উন্নীত করতে চায় সরকার। এজন্য জীবন ও স্বাস্থ্য বিমার ছাতার নিচে মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ নিয়ে আসার লক্ষ্য নিদিষ্ট করে প্রস্তুত করা হয়েছে খসড়া জাতীয় বিমা নীতিমালা-২০১৩। প্রায় দুই বছর আগে এর উদ্যোগ নেওয়া হলেও কয়েক দফা স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রনালয়। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হলে মন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ বিমা কর্পোরেশন ও জীবন বিমা কর্পোরেশনের মতামত গ্রহণ করার পর তা চুড়ান্ত করা হয়।

১০ সালা কৌশল : বিমাখাত সম্পৃক্ত সকল পর্যায়ের সাথে এক বৈঠকে আইডিআরএ জাতীয় বিমা নীতি ২০১৩ (খসড়া) এর বাস্তবায়নে তিন ধাপে দশ সালা কর্মকৌশলও গ্রহণ করেছে। ১০ বছর মেয়াদী কর্মকৌশলে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে গতবছর (২০১৩) ও চলতি বছর  স্বল্পমেয়াদী, ২০১৫ থেকে  ২০১৭ সাল নাগাদ মধ্যমেয়াদী ও ২০১৮ খেকে ২০২২ সাল নাগাদ দীর্ঘমেয়াদী কর্মকৌশলের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে।

অনিয়ম ও তদারকি জোরদার: আইডিআরএ সূত্রে জানা জানা গেছে বিমা খাত নিয়ন্ত্রণে বিগত বছরগুলোতে একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ বিমা খাতে বিশেষ মূল্যহার তুলে দেয়া, নগদ টাকায় লেনদেন বন্ধ করা, বাকিতে ব্যবসা, সাধারণ বিমায় ১৫ শতাংশ ও জীবন বিমায় ৪৯ শতাংশ কমিশন নির্ধারণ, জীবন বিমায় সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণসহ বিমা খাতের উন্নয়নে সার্ভিস রুলস ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। তবে এসব পদেক্ষেপের অধিকাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এ বছর এটি আবারও বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছে।

সক্রিয় ভিজিল্যান্স টিম: আইডিএরএ সূত্রে জানা গেছে, বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর হচ্ছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। দীর্ঘ দিন আইডিআরের পরিদর্শন দলের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর আবার এটি সক্রিয় হয়েছে। শুরু হয়েছে কোম্পানি পরিদর্শন ও কার্যক্রম পরিচালনা। পরিদর্শনে চিহ্নিত অনিয়মের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে পাঁচটি কোম্পানিকে জরিমানা ও কয়েকটি কোম্পানিকে সতর্ক করা হয়েছে। জরিমানা করা কোম্পানিগুলো হচ্ছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স,স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও ইস্টার্ণ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। পাঁচটি কোম্পানিকে মোট চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জানা গেছে, কোম্পানিগুলো সম্পূর্ণ বাকিতে ব্যবসা, নির্ধারিত সীমার বেশি দেওয়া নগদ কমিশন, অর্জিত নেট প্রিমিয়ামের বিপরীতে যাতায়াত বিল প্রদান এবং ট্যারিফ রেট লঙ্ঘনের দায়ে এ কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা হয়।

আইডিআরের সদস্য ফজলুল করীম অর্থসূচককে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে অনিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকা বিমা খাতকে আইডিআরএ শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে বিভিন্ন নিয়ম কানুন প্রনয়ন করেছে। যা বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় খুবই ইতিবাচক। এর ফলে আগের থেকে এখন কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা বেড়েছে, দুর্নীতি কমেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মতো ব্যবসা করলে বিমা খাতে একটি সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে। যা বিমা খাতের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে আরেক সদস্য সুলতান-উল আবেদনী মোল্লাহ অর্থসূচককে বলেন, একটি রেগুলেটরি প্রতিষ্টনের যে ধরনের কাজ করা প্রয়োজন আমরা সেভাবে কাজ করে যাবো। আমাদের অভিঙ্গতার আলোকে বিমা খাতকে একটি কাঙ্খিক লক্ষে পানে নিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, আমাদের তদারকির মাধ্যমে যাতে পলিসিহোল্ডার ও কোম্পানিগুলোর শার্ত পুরণ হয় এবং এ খাত থেকে যেন জাতীয় অর্থনীতিতে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারে সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাবো।

জিইউ