
যেসব ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে সেইসব ঋণের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক সম্মেলনের সমাপনি বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।
গভর্নর বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কিছু নীতি নমনীয় করেছে। তবে এ নমনীয়তার সুযোগ নিয়ে যেসব ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের আশ্রয় নিয়েছে তাদের সেসব ঋণ যাতে পুনরায় শ্রেণীকৃত না হয়, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ায় সেপ্টেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকে শ্রেণীকৃত ঋণের হার ১২.৭৯ শতাংশ বেড়েছে বলে তিনি জানান।
বৈদেশিক উৎস হতে ব্যবসায়ীগণ সাশ্রয়ী সুদহারে যে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করছেন, তা যেন স্বল্পমেয়াদি না হয় এবং এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যেন তাদের সামর্থের অতিরিক্ত গ্যারান্টি প্রদান না করে সে বিষয়টিও মহাব্যবস্থাপকদের খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
গর্ভনর বলেন, গত পাঁচ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ শতাংশের ওপরে অর্জিত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। যদিও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ায় তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৭.৬ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকের কার্যপরিধি ও এর আয়-ব্যয় নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ইতোমধ্যে ১০৪৪ ডলারে পৌঁছেছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের সংখ্যা ৪৮টি থেকে বেড়ে ৫৬টি এবং শাখার সংখ্যা ৬৮৮৬টি থেকে বেড়ে ৮৫৬০টি হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের হিসাব সংখ্যা ৬৩ শতাংশ বেড়ে ৬ কোটি ১২ লক্ষ, সঞ্চয়ের পরিমাণ ১৩৪ শতাংশ বেড়ে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা এবং ঋণের পরিমাণ ১১৬ শতাংশ বেড়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন ১৪৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ব্যাংকের সুপারভিশন কার্যক্রম জোরদার করার জন্য ইলেকট্র্রনিক ড্যাশবোর্ড ও ইন্টিগ্রেটেড সুপারভিশন সিস্টেম প্রবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডেপুটি গভর্নর এস কে সূর চৌধুরী বলেন, বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং খাত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এজন্য কার্যকর ব্যাংক সুপারভিশনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা যেন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে পুরোপরি বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে নজরদারির রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাত দক্ষভাবে পরিচালনার প্রধান নিয়ামক হচ্ছে সুদৃঢ় আর্থিক বাজার কাঠামো এবং এর নিয়ন্ত্রণ কাঠামো। এ দু’টি দিকেই আমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকের তারল্য ঝুঁকি ও ঋণ শৃঙ্খলার বিষয় সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। কাঙ্খিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো যেন উৎপাদনমুখী ও দরিদ্র-বান্ধব খাতগুলোতে বেশি করে ঋণ প্রদান করে সে বিষয়ে আমাদের নজর রাখতে হবে। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেন নিয়ম-নীতি মেনে চলে, আইনের মধ্যে থেকে উভয় বাজার যেন একে অপরকে সমর্থন দিয়ে যেতে পারে সে দিকেও নজর দিতে হবে বলে জানান তিনি।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারভিশন চ্যালেঞ্জ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নীতি-পদক্ষেপ গ্রহণ, তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সমন্বয় রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা এবং এসবের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে মানবসম্পদের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রভৃতি বিষয়ের উপর আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসএই/