
সৌদি আরবে প্রথমবারের মত নারী গৃহকর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রাথমিকভাবে বিনা খরচে প্রতিমাসে ১০ হাজার নারী গৃহকর্মী সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি ট্রেনিং সেন্টারে প্রায় ২০ লাখ নারীকে এই কাজে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বিভিন্ন সময়ে নারী এবং পুরুষ শ্রমিক পাঠালেও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে গৃহকর্মী ভিসায় জনশক্তি রপ্তানি করেনি বাংলাদেশ। দেশটিতে বর্তমানে ১৩ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন ভিসায় অবস্থান করছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি মাসে অন্তত ১০ হাজার কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। এজন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকবে না। এটা তারা তাদের চাহিদা থাকাকালীন সময় পর্যন্ত নেবে।
সৌদি গেজেটকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনস্যুল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি কেন্দ্রের প্রশিক্ষণরত নারী প্রশিক্ষণার্থী সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
তিনি জানান, এসব নারী শ্রমিকদেরকে ৩১ হাজার টাকা বেতনের বিপরীতে সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, যেসব প্রশিক্ষণার্থীকে দেশের বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের জন্য গমন করবেন তাদেরকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করবে সরকার।
নাজমুল ইসলাম আরও জানান, সৌদি আরবে বর্তমানে ১৩ লাখ বৈধভাবে বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এছাড়াও আরও ৮ লাখ বাংলাদেশি তাদের ভিসা নবায়ন করেছেন। তবে ৮০ হাজার বাংলাদেশি দুর্ভাগ্যবশত ভিসা নবায়ন করতে পারেননি।
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক নারী। কিন্তু বাংলাদেশের অভিবাসী নারী শ্রমিকের হার অত্যন্ত কম। দীর্ঘ সময় এই হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ; ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬ শতাংশ। গত বছর প্রথম নারীদের বিদেশে পাঠাতে নিবন্ধন করে সরকার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পৌনে তিন লাখ নারী শ্রমিক কাজ করছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন, জর্ডান, কাতার, কুয়েত, মরিশাস, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৬২ জন নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গেছেন লেবাননে, ৭৯ হাজার ৩৪৩ জন।
বিএমইটি সূত্র মতে, ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী গেছেন জর্ডানে। এ সংখ্যা ২১ হাজার ২৪৩ জন। এ ছাড়া আরব আমিরাতে ১৩ হাজার ৭১০, লেবাননে ১০ হাজার ৭৫০, ওমানে ছয় হাজার ৬৮, মরিশাসে এক হাজার ৫৫৭, সৌদি আরবে ১৬৭, বাহরাইনে ১৪১, সিঙ্গাপুরে ১৩৩, ইতালিতে ২৮, মালয়েশিয়ায় ২৩ ও সাইপ্রাসে ১২ জন নারী কর্মী গেছেন।
২০১৩ সালে নারীদের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি হয় কাতারে। ওই দেশে গেছেন দুই হাজার ১০০ নারী। এ ছাড়া গত বছর হংকং পাড়ি দিয়েছেন ৩২৩ নারী কর্মী।