বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল হলো চলন বিল। এই বিল উত্তর বঙ্গের নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার মধ্যে আবস্থিত। দেশের সর্ববৃহৎ এই বিলটি বিভিন্ন খাল দ্বারা সংযুক্ত অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি নিয়ে গঠিত। অপরুপ সৌন্দর্য্যের এই চলন বিল কাছ থেকে না দেখলে মনের গহীন কোঠায় অতৃপ্তি থেকে যাবে যে কারোর। যেমনি নাম চলন বিল তেমনি তার সৌন্দর্য্য। বর্ষাকালে তো পানিতে একাকার হয়ে যায় প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। তবে, চলন বিল বর্ষাকালেই অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়। তখন দর্শনার্থীর সংখ্যাও থাকে ভরপুর।
সর্ববৃহৎ এই চলন বিলটি রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের একটি বড় অংশজুড়ে অবস্থান করছে। এটি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা ও গুমনী নদীর তিরে অবস্থিত। বিলটির দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত পাবনা জেলার নুন নগরের কাছে অষ্টমনীষা পর্যন্ত বিস্তৃত।
চলন বিল গঠনকারী ছোট ছোট বিলগুলো হলো- পিপরূল, পূর্ব মধ্যনগর, লারোর, ডাঙাপাড়া, তাজপুর, নিয়ালা, চলন, মাঝগাঁও, ব্রিয়াশো, চোনমোহন, শাতাইল, খরদহ, দারিকুশি, কাজীপাড়া, গজনা, বড়বিল, সোনাপাতিলা, ঘুঘুদহ, কুরলিয়া, গুরকা, দিক্ষিবিল এবং চিরল।
তবে বড় আকারের বিলগুলোর বেশিরভাগই পাবনা জেলায় অবস্থিত। এগুলো হলো- বড় বিল, গজনা বিল, সোনাপাতিলা বিল, ঘুঘুদহ, চিরল বিল এবং গুরকা বিল ইত্যাদি। তবে গজনা বিলটি দুলাই এর দক্ষিণে ১২৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। বড় বিলের আয়তন ৩১ বর্গ কিলোমিটার। প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সোনাপাতিলা বিল পাবনা জেলার উত্তরাংশ জুড়ে অবস্থিত। চাটমোহর উপজেলায় কুরলিয়া ও দিক্ষি বিল দুটি যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
চলন বিলের গঠন ঐতিহাসিকভাবেই আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলন বিলের প্রধান যোগান দানকারী প্রণালী যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার জল নিষ্কাশন করত। বড়াল চলন বিল থেকে জল নির্গম পথ হিসেবে কাজ করে এবং বিলের পানি বহন করে যমুনা নদীতে ফেলে।
চলন বিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- করতোয়া, আত্রাই, গুড়, বড়াল, মরা বড়াল, তুলসী, ভাদাই, চিকনাই, বরোনজা, তেলকুপি ইত্যাদি।
কিন্তু ভীষণ দুঃখের বিষয় বর্তমানে এই চলন বিল দ্রূত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর গঙ্গা থেকে পলি এসে পড়ার কারণে বিগত দেড়শ বছরে বিলটি দক্ষিণ দিক থেকে অন্ততপক্ষে ১৯.৩২ কিলোমিটার সরে এসেছে। বিলটিতে প্রবাহদানকারী নদীগুলো যথাঃ গুর, বড়াল ইত্যাদি এটির আয়তন সংকোচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভৃমিকা রাখছে। বিলটির পানি নিষ্কাশন প্রণালী এবং পলির বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখার জন্য গণপূর্ত বিভাগ ১৯০৯ সালে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে, চলন বিল তার পূর্বেকার আয়তন ১,০৮৫ বর্গ কি.মি থেকে সংকুচিত হয়ে ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।
চলন বিলে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চিতল, কৈ, মাগুর, শিং, টাকি, বোয়াল, শোল, ফলই, রম্নই, মৃগেল, চিংড়ি, টেংরা, মৌসি, কালিবাউশ, রিটা, গজার, বৌ, সরপুটি, তিতপুটি, পুঁটি, গুজা, গাগর, বাঘাইর কাঁটা প্রভৃতি জাতের মাছ।
চলন বিল উত্তর বঙ্গের নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার মধ্যে আবস্থিত বিধায় আপনি যদি সিলেট, ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আসতে চান তাহলে আপনাকে আসতে হবে ঢাকা হয়ে। ঢাকা থেকে রাজশাহীর গাড়িতে সিরাজগঞ্জ অথবা নাটোরের কাছিকাটা নামবেন। কাছিকাটা দিয়ে যাবার ক্ষেত্রে কাছিকাটা থেকে ৮ কি.মি দুরে চাচকৈর বাজার। চাচকৈর বাজার থেকে ৫-৬ কি. মি. দুরে চলনবিলের প্রান্ত ঘেষে খুবজীপুর গ্রামে গড়ে উঠা চলনবিল জাদুঘর। আর চলনবিল জাদুঘরের পরেই পাবেন সেই কাঙ্খিত চলনবিল ।
ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ আসা যায় সড়ক ও রেল পথে। ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহন, এস আই এন্টারপ্রাইজ, গাবতলী থেকে ইউনিক বাস যায় সিরাজগঞ্জ। ভাড়া ১৭০ টাকা। এছাড়্ চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে সিমান্ত সুপার সার্ভিস, দামপাড়া স্টেশন রোড থেকে ইউনিক সার্ভিস যায় সিরাজগঞ্জ। ভাড়া ৩৫০ টাকা।
তাছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে সদানন্দপুর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ শহর। ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো সদানন্দপুর স্টেশনে থামে। ভাড়া ১১০-১২৫ টাকা মাত্র।
সিরাজগঞ্জ শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেলগুলো হলো- শহরের স্বাধীনতা স্কোয়ারে হোটেল আল হামরা, (০১৭৪৫৬২৯২৬৪, ০৭৫১-৬৪৪১১) এসি এক শয্যা কক্ষ ৫০০ টাকা, এসি দ্বি-শয্যা কক্ষ ৭০০ টাকা, নন-এসি এক শয্যা কক্ষ ৪৫০, নন-এসি দ্বি-শয্যা কক্ষ ২৫০ টাকা পর্যন্ত। শেখ মুজিব রোড হোটেল অনিক (০১৭২১৭১৯২৩৫, ০৭৫১-৬২৪৪২) এসি এক শয্যা কক্ষ ৪৫০ টাকা, এসি দ্বি-শয্যা কক্ষ ৭০০ টাকা, নন-এসি এক শয্যা কক্ষ ১৫০, নন-এসি দ্বি-শয্যা কক্ষ ২৫০ টাকা মাত্র।
এএস