
খুলনার দশ জেলায় কৃষকরা পুরো উদ্যমে বোরো আবাদ করছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আবাদ শুরু হয়েছে এবং আগামি এপ্রিলে ফসল কাটা শুরু হবে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে এবং সার ও সেচ সংকট না হলে এবারও বোরোর বাম্পার ফলন আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষকরা জানিয়েছে, প্রতিবারের মতো এবারও তারা বোরোর ভালো ফলন আশা করছেন। তারা বলছেন, সঠিক সময়ে নিরবচ্ছিন্ন সেচ, কীটনাশক ও সার পাওয়া গেলে বোরোর খুবই ভালো ফলন হবে। এক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন তারা। তবে তারা অভিযোগ করেন, সেচ নিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। নিম্নমানের বীজ আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সেচ কাজ ব্যাহত হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কুয়াশার কিছুটা আধিক্য থাকায় বীজতলা তৈরিতে প্রথম পর্যায়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ওই সময় চারাগুলো লালচে বর্ণ ধারণ করে। পরবর্তীতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ সমস্যা কৃষকরা কাটিয়ে ওঠে। চারার অবস্থাও এখন অনেক ভালো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবার খুলনা বিভাগে মোট ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬০৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন (চাল)। গত রোববার পর্যন্ত খুলনা জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে ৪৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। বাগেরহাট জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ হাজার ১৮৬ হেক্টর এবং আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে। সাতক্ষীরা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৭৩ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমির মধ্যে আবাদ হয়েছে ৬৩ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। যশোর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৮ হেক্টর জমির মধ্যে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমি। এছাড়া নড়াইল জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪১ হাজার ৫০১ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি। ঝিনাইদহ জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৮১ হাজার ৩১০ হেক্টর জমি, আবাদ হয়েছে ৬৮ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমি। চুয়াডাঙ্গা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার ৭১৪ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ৪২০ হেক্টর। কুষ্টিয়া জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার ১১১ হেক্টর আবাদ ১৭ হাজার ১৪০ হেক্টর, মাগুরা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার ৬৭৬ হেক্টর এবং আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে। মেহেরপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার ৮৪৪ হেক্টর এবং আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। আগামি দু’সপ্তাহের মধ্যে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় অর্জিত হবে।
কৃষি বিভাগ সূত্রটি আরও জানায়, গত বছর আবহাওয়া কিছুটা বিরূপ থাকায় বোরোর আবাদ কম হয়েছিল। কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে অনেক স্থানেই বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমি। প্রকৃত আবাদ হয়েছিল ৫ লাখ ৭২ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমি। তবে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে কম আবাদ হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথা সময়ে সেচ সার দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছিল।
ওই সময় কৃষি বিভাগ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭৩ মেট্রিক টন (চাল)। উৎপাদন হয়েছিল ২৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭১ মেট্রিক টন (চাল)।
খুলনাঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক শেখ হেমায়েত হোসেন জানান, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবং সার ও সেচ যথাসময়ে পাওয়া গেলে এবারও বোরোর বাম্পার ফলন আশা করা করছি। মাঠে পূর্ণ আবাদ চলছে। বীজতলাগুলোর অবস্থাও ভালো। আগামি দুই সপ্তাহ বোরো রোপণ চলবে। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ জমিতে আবাদ সম্ভব হবে। তবে এবার কৃষকদের জৈব ও প্রাকৃতিক সার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আলোর ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে কীট-পতঙ্গ নির্মূলের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কেএফ