
শনি কাটছে না রাজশাহীর আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের। গত বছরে হিমাগারে রাখা প্রতিবস্তা আলুতে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা লোকসান হয়। এবার লোকসান পুষিয়ে নিতে মাঠে ব্যাপক আলু চাষ করে চাষিরা। কিন্তু আগাম আলুতে এবারও লোকসান হচ্ছে চাষিদের।
বর্তমানে প্রতি কেজি নতুন আলু প্রতিমণ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আলুক্ষেত। তাই মাঠের আলু বাড়িতে ওঠার আগেই লোকসানের আভাস দিচ্ছে।
গত মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন রাজশাহী মহানগরীর নতুন বিলশিমলা এলাকার টিটু শেখ। এর মধ্যে ২০০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছিলেন। দাম কম থাকায় এসব আলু বিক্রি করতে পারেনি। এক বস্তা (৮৫ কেজি) আলু হিমাগারে রাখতে গিয়ে সবমিলিয়ে ১২৫০ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিবস্তা আলুর দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এই অবস্থায় টিটু শেখের প্রতি বস্তায় ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেই লোকসান মাথায় নিয়ে চলতি মৌসুমে আবারও ৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেন। তবে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আলুক্ষেত। তাই মাঠের আলু বাড়িতে ওঠার আগেই লোকসানের আভাস দিচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে প্রতিকেজি নতুন আলু ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু টিটু শেখ নয় তার মতো রাজশাহীর হাজার হাজার আলু চাষিরা টানা দুই মৌসুমে লোকসানের মুখ দেখতে যাচ্ছে।
আলু ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহীতে ২২টি হিমাগার রয়েছে। প্রতিটি হিমাগারে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ বস্তা আলু রেখেছেন এলাকার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। গত বছর আলুর দাম ভালো ছিল এবং বেশ লাভবান হয়েছিল কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এ বছরও লাভ হওয়ার আশায় তারা হিমাগারগুলোতে আলু রাখেন। এবার এক বস্তা (৮৫ কেজি) আলু হিমাগারে রাখতে গিয়ে ১২৫০ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারগুলোতে প্রতিবস্তা আলু ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত মৌসুমে লোকসান পুষিয়ে নিতে আলু চাষিরা বেশি করে আলু চাষ করে। কিন্তু এবারও তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বাজারে দাম কম থাকায় অনেকেই আগাম আলু চাষ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। এছাড়া এবার লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আলুক্ষেত। আলু গাছের পাতায় ফোস্কা পড়ার মতো দেখা দেওয়ার পরই সমস্ত গাছ পুড়ে যাবার মতো হয়ে মরে যাচ্ছে।
তানোর উপজেলার সিধাইড় গ্রামের আলুচাষি রাজু সোনার জানান, তিনি ১৬ বিঘা জমিতে সময় উপযোগী আলুচাষ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লেট ব্লাইট রোগ দেখা দেওয়ায় তার আলুর ক্ষেত ঝলছে গেছে। প্রতি সপ্তাহে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এখন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের লোকজন দেখে বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।
কৃষকরা জানান, গত বছরে আগাম জাতের আলুচাষ করে লাভবান হয়েছেন তারা। কিন্তু চলতি মৌসুমে আগাম জাতের আলুচাষ করে খরচের তুলনায় দ্বিগুণ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অফিদপ্তরের সূত্র মতে, এবার জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪০৯ হেক্টর। এর বিপরীতে মাঠ চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৯১০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৫০১ হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে আলু ক্ষেতে লেট ব্লাইট নামক রোগ দেখা দিয়েছে। জমিতে ছত্রাক নাশক স্প্রে ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যাবে। আলু ক্ষেতে পচন রোগ দমনের জন্য কৃষি বিভাগের লোকজন বিভিন্ন পরামর্শ দিতে মাঠে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
কেএফ