
বাংলাদেশের পোশাক খাত আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়েছে। আইটিভির তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে নানা প্রতিবেদন। আইটিভির ওই প্রামাণ্যচিত্রে দেখা গেছে ঢাকার কয়েকটি পোশাক কারখানায় কাজ করছে ১৩-১৫ বছরের কিশোরীরা। অথচ বাংলাদেশের আইন অনুসারে এই বয়সের কোনো ছেলে-মেয়েকে কোনো কাজে বাধ্য করা যাবে না।
গোপন ভাবে নেওয়া আইটিভির ওই ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, কিশোরীরা অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করছে । এদের বেশির ভাগই বাধ্য হচ্ছে ১১ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে। অথচ বেতন পাচ্ছে মাত্র ২৩০০ টাকা।
আইটিভির ওই প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে ব্রিটিশ প্রভাবশালী পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ান তার প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে তাতে দেখা গেছে দেশটির পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের যে সকল কারখানা থেকে
পোশাক কিনছে বা তৈরি করাচ্ছে সেখানে এখনও চলছে শিশুশ্রম। সেই সাথে ওই সকল কর্মীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক ভাবে হয়রানির কথাও বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১১৩০ জন নিহত এবং সহস্রাধিকের বেশি আহত হন। এরপর কারখানাগুলোয় কাজের পরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তা উন্নয়নে রিটেইলার কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতিগুলো এখন পালন করেনি কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক বছর ধরে কারখানায় বার বার আগুন লাগার পরও সেখানে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কারখানাগুলো অনিরাপদ পরিবেশের সাথে লাথি, চড় এমনকি ফ্যাব্রিক রোল দিয়ে আঘাত করার মতো শারীরিক নির্যাতন চলে শিশু শ্রমিকদের ওপর।
গার্ডিয়ান জানায় ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্রিটিশ ব্যান্ড লি কুপার, বিএইচএস এবং অন্যান্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পোশাক তৈরি কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
রেডিও টাইসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে আইটিভি গোপন ক্যামেরায় এই চিত্র ধারণ করেছে দুটি কারখানা থেকে। এতে দেখা যায় রাজধানী মিরপুরের অলিরা ফ্যাশন কারখানার এক নারী শ্রমিককে সপ্তাহে জোরপূর্বক ৮৯ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। যেসব নারী শ্রমিক দ্রুত কাজ করতে পারেন না ও রাতে কাজ করতে চান না তাদেরকে কোম্পানি ব্যবস্থাপকরা নির্যাতন করেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাদের মারধোর এবং ছাঁটাইয়েরও হুমকি দেওয়া হয়।
ওই প্রামাণ্য চিত্রটির নির্মাতা আইটিভির সাবেক বিজনেস এডিটর লোরা কুয়েন্সবার্গের বরাত দিয়ে রেডিও টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইটিভি তার অনুসন্ধানে বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে যে শিশুশ্রম চলছে তার বেশ কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
লোরা বলেন, দেশটিতে কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ এখনও বেশ নাজুক। সম্প্রতি সেখানে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও অবস্থার খুব পরিবর্তন হয়নি।’
লোরার ভাষ্য, বাংলাদেশে পোশাক কারখানার সত্যিকার নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হবে তখন, যখন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা যে কাপড়টি আমরা পরিধান করি তার তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া নিরাপদ হবে। লোরার মতে এ জন্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে।