
জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের ৫টি ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় বেসরকারি দু’টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের মুখোমুখি হওয়া এ দু ‘ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি) এহসানুল হক এবং ব্যাংক এশিয়ার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (প্রাইম ব্যাংকের সাবেক এসইভিপি) মো. মাহমুদ হোসেন।কমিশনের সিনিয়র উপ-পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে নিশ্চিত করেন দুদকের এ কর্মকর্তা।
সৈয়দ ইকবাল বলেন, বিসমিল্লাহ গ্রুপ জালিয়াতি করে নিজেরাই বিদেশে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খোলে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। ওই চুক্তির কপি দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিয়ে বড় অঙ্কের ঋণ নেয়। কিন্তু তারা ঋণের বিপরীতে বিদেশ থেকে কোনো পণ্য আমদানিও করেনি, আবার আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে কোনো পণ্য তৈরি করে তা বিদেশে রফতানিও করেনি। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হয়েছে জালিয়াতির মাধ্যমে। আর তাদের এ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করেছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় পাঁচটি ব্যাংকের (জনতা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক এবং শাহজালাল ব্যাংক) কর্মকর্তারা। এসক ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঋণ দেওয়ার পূর্বে কাগজ পত্র সঠিকভাবে যাছাই বাচাই না করে তাদেরকে ক্রমাগত ঋণ দিয়ে দুর্নীতি সাহায্য করেছেন।যা প্রমান করে তারাও এ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।তাছাড়া ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলেও ব্যাংক গুলোর অডিট বিভাগ ছিলো নিস্ক্রিয়।
দুদক সূত্র জানায়, বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানে ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে এ অনুসন্ধান দল ৩ নভেম্বর ২০১৩ সালে গ্রুপটিরর চেয়ারম্যান ও পরিচালকসহ ১৩ কর্মকর্তা এবং পাঁচটি ব্যাংকের ৪০ কর্মকর্তাসহ মোট ৫৩ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা দায়ের করে। মামলাগুলোতে এ দু’ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আসামি করা না হলেও তারা ঋণ জালিয়াতির সময় তারা প্রাইম ব্যাংকে কর্মকর্তা থাকায় তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিসমিল্লাহ গ্রপের এ ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় গত ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ফান্ডেড ৯৯০ কোটি ৩ লাখ টাকা ও নন-ফান্ডেড ১৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা জালিয়াতির দায়ে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা গুলোতে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ১৩ কর্মকর্তাকে এবং তাদেরকে অবৈধভাবে ঋণ দেওয়ায় জনতা ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংকের ৪০ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হলেও পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ না থাকায় মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল ব্রাক ব্যাংকের এমডি (প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি (প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি) এহসানুল হক এবং ব্যাংক এশিয়ার এমডি (প্রাইম ব্যাংকের সাবেক এসইভিপি) মো. মাহমুদ হোসেনকে।
এইউ নয়ন