আইডিআরে স্থবিরতা, খোঁজা হচ্ছে নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্য

আইডিআরএ

IDRAপূর্ণাঙ্গ পর্ষদ না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ)কার্যক্রম। বিমা আইন অনুযায়ী সংস্থাটিতে চার জন সদস্য ও এক জন চেয়ারম্যান থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র এক জন সদস্য। তিনিই এখন ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মত একা সামলে যাচ্ছেন সংস্থাটির কার্যক্রম। কিন্তু কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে অর্থমন্ত্রণালয় বিমা খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান ও সদস্য খুঁজতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে চেয়ারম্যান পদে তিনজনকে সামনে রেখে এগুচ্ছে মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে সদ্যসাবেক চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদ চৌধুরীও রয়েছেন। বাকী দুজন হচ্ছেন সংস্থার বর্তমান সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়রম্যান ফজলুল করীম এবং সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান।

গত বছরের প্রথমভাগেই আইডিআরএ শুরু হতে থাকে সদস্য শুন্যতা। কিন্তু সময়মত শুন্য পদে নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। সংস্থার সদস্য সৈয়দ আহম্মেদের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হয় গত বছর এপ্রিল মাসে। সদস্য নুরুল ইসলাম মোল্লার ৬৭ বছরের বয়সসীমা অতিক্রম করায় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর তার পদটি খালি হয়। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ জানুয়ারি শেষ হয় সদস্য নব গোপাল বণিকের চুক্তির মেয়াদও। সর্বশেষ ফজলুল করিম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলে সদস্য হিসেবে তার পদটিও খালি হয়।

নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্যের সন্ধানে মন্ত্রণালয়: আইডিআরএ চেয়ারম্যান ও চার সদস্যের পদ খালি হওয়ায় খোঁজা হচ্ছে যোগ্য চেয়ারম্যান ও সদস্য। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতে কাজ চলছে।

মন্ত্রণালয় সাবেক চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদকে পুনরায় নিয়োগ দিতে আগ্রহী। এ বিষয়ে তাদের দেওয়া প্রস্তাবে উচ্চ মহল থেকে সম্মতিও মিলেছে। তবে সরকারের প্রভাবশালী একটি অংশ তার নিয়োগের বিরোধীতায় প্রবলভাবে মাঠে নেমেছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সংস্থাটির সাবেক কয়েকজন সদস্যের  অভিযোগপত্রও মন্ত্রণালয়কে একটি অস্বস্তিতে ফেলেছে।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ভারমুক্ত করে পুরোপুরি চেয়ারম্যান করার চিন্তাভাবনা চলছে।

অপর সূত্র জানায়, সাবেক অর্থসচিব জাকির হোসেনকে আইডিআরএর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। আবার এ খাতটির বেশ কিছু সংস্কারের কারণে এবং নিজের বেশ শক্ত লবিং থাকায় মনে করে হচ্ছে শেফাক আহম্মেদই আবার ফিরতে পারেন সংস্থাটির প্রধানের পদে।

এ ছাড়া সদস্য নিয়োগ দেওয়ার কাজও চলছে। সুলতানুল আবেদীন মোল্লাহ ও জুবায়ের আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে সদস্যদের তালিকায়।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, কেবল একজন প্রধান দিয়েতো আর সংস্থার কাজ চলবে না। সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো খালি থাকার নেতিবাচক প্রভাব পরেছে এর কার্যক্রমে।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য: সমপ্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, বিমাটা ছিল লুটপাট ও চুরির ক্ষেত্র। কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না এ খাতে। আইডিআরএ গঠিত হওয়ার পর লুটপাট বন্ধ করা হচ্ছে। এ জন্য অবশ্য বাঁধাও আসছে। বিমা খাতকে ঠিক করতে আইডিআরএ চেয়ারম্যান হিসেবে শক্ত লোকই নিয়োগ করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য: আইডিআরএ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ফজলুল করিম অর্থসূচককে বলেন, পূর্ণাঙ্গ বোর্ড না থাকায় সংস্থার বেশকিছু কাজ ঝুলে আছে। কারণ কোনও কিছু অনুমোদনের জন্য সংস্থার বোর্ডের কোরামই পূরণ হচ্ছে না।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, তিনি ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পেয়েছেন বটে কিন্তু বিমা খাতকে এগিয়ে নিতে সংস্থাটির স্থায়ী চেয়ারম্যান এবং সদস্য নিয়োগ দেওয়াটি জরুরি।

উল্লেখ্য ২০১১ সালে সরকার বিমাকারীদের অধিকার রক্ষা, নতুন কোম্পানির অনুমোদন দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য বিমা বিভাগের পরিবর্তে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ চালু করে।