
ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনাও করেছে তারা। খুব শিগগীরই তা ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে উঠছে বলে জানা গেছে। ডিএসই সুত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, ডিএসই এখন ডিমিউচ্যুয়ালাইজেড প্রতিষ্ঠান। তাই বিশ্বের অন্য পুঁজিবাজারের সঙ্গে মিল রাখার জনই এমন পরিকল্পনা করছেন তারা। পরিকল্পনা অনুসারে ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলোর জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করা হবে। এ মার্কেটের নাম হবে
অল্টারনেটিভ মার্কেট ফর ইনভেস্ট (এএমআই)।
তবে কি আকারের মূলধনসম্পন্ন কোম্পানি এ বাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে তা জানা যায় নি। বর্তমানে মূল বাজারে তালিকাভূক্তির ক্ষেত্রে আইপিও পরবর্তী ন্যুনতম মূলধন হতে হয় ৩০ কোটি টাকা। আর ছোট কোম্পানির জন্য গঠিত ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে তালিকাভুক্তির জন্য ন্যুনতম মূলধন প্রয়াজন ১০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, এর মাধ্যমে ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলো তাদের মূলধন বাড়িয়ে মূল বাজারে অন্তর্ভূক্ত হবে। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আরও সম্প্রসারণ হবে।
বিশেষজ্ঞ বলছেন, বিশ্বের অন্যদেশের সঙ্গে আমাদের দেশের ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) কোনো মিল নেই। অন্যদেশে ওটিসি মার্কেটের লক্ষ্য ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে পরিচালিত হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট-এর (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট আব্দুল হান্নান জোয়ারদার অর্থসূচককে বলেন, ডিএসই’র এই পরিকল্পনা যুগোপযোগী। এর বাস্তবায়ন হলে আমাদের দেশের পুঁজিবাজারও বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারবে। এর ফলে ছোট মূধনের কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী হবে বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে,ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোর লেনদেন স্ক্রিনভিত্তিক করার জন্য আলাদা বোর্ড থাকবে বলে শোনা যাচ্ছে। এমনটি হলে মূল বাজারের মত এই বাজারের শেয়ার কেনা-বেচার অর্ডার কম্পিউটারের পর্দায় দেখা যাবে। আর বিক্রেতার মত ক্রেতাও এতে আদেশ দিতে পারবেন।
অন্যদেকে ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলোর মার্কেটের নাম হবে অল্টারনেটিভ মার্কেট ফর ইনভেস্ট(এএমআই)। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তার কোম্পানিগুলো কম খরচে প্রথমে এই মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। পরে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখে মূল মার্কেটে নেওয়া হবে। আর ওটিসি মার্কেটকে আধুনিক করতে আসন্ন বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়,বর্তমানে ডিএসইর আইটি বিভাগের অবস্থা খুবই নাজুক। তাই একে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএসই। আর আইটি সেক্টরের পরিবর্তন হলে ওটিসি মার্কেটকে স্ক্রীনে নিয়ে আসা সহজ হবে।
এ বিষয়ে ডিএসই’র সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু অর্থসূচককে বলেন, বিশ্বের অন্যদেশের মতো আমাদের দেশেও আমরা ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে একটি মার্কেট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলো বড় মূলধনে উন্নীত হওয়ার একটি সুযোগ পাবে। এক সময় তারা মূল মার্কেটে চলে আসবে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একটেল (রবি) এক সময় এমন ছোট মূলধনের কোম্পানি ছিল, এখন তারা আজ অনেক বড় কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। আমরাও এমন কিছু করতে চাই যা মানুষ উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করবে।
উল্লেখ, বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি নিরসনে ২০০৯ সালে ডিএসইতে ওটিসি মার্কেট চালু করা হয়। কিন্তু এই মার্কেটে লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আধুনিক যুগের সাথে অনেকটা অসঙ্গতি রয়ে গেছে ওটিসি মার্কেট। কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শাস্তি হিসেবে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়।
কিন্তু কোম্পানির চেয়ে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তিই বেশি। কারণ অনেক কোম্পানি ওটিসি মার্কেটে যাওয়ার পর আর তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে ৬৮টি কোম্পানি ওটিসি মার্কেটে রয়েছে। মার্কেট চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ২০টি কোম্পানির লেনদেন বন্ধ রয়েছে বলেও জানা যায়। তাই বর্তমানে ওটিসি মার্কেট নামে যে মার্কেট রয়েছে, এটার কোন প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
জিইউ/এস