
নতুন বইয়ের ঝুঁড়ি মাথায় নিয়ে বাংলাবাজার বই মার্কেটের তৃতীয় তলায় উঠছেন রফিকুল ইসলাম। কয়েক ঝুঁড়ি বই তিন তলায় তুলতে না তুলতেই শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে তার। এখন কাজ কেমন হচ্ছে, জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, এখন ব্যস্ততা বেশি।
বছরের এই সময়টাতে একটু কাজ বেশি থাকে। নতুন বছরের বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি মেলার জন্য বাড়তি একটা চাপ থাকে বলে জানান তিনি।
আর বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে খুট খাট শব্দে কাজ করছেন কাঠমিস্ত্রি আব্দস সামাদ। কদিন যাবৎ ভারী ব্যস্ততা রয়েছে তার। একুশে বই মেলা উপলক্ষে এমন ব্যস্ততা শুধু রফিকুল আর সামাদের নয়। বাংলা একাডেমী থেকে শুরু করে আয়োজক, লেখক, প্রকাশকসহ ছাপাখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার।
মেলার ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছিলাম বাংলাবাজারের সোহেল বুক ডিপোর মালিক সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি অর্থসূচককে জানান, এবারে মেলায় তার প্রকাশনা থেকে কবিতা ও উপন্যাস মিলে ২০টি বই প্রকাশ পাচ্ছে। তাতে করে একটু ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, এবার মেলার বেশির ভাগ ইউনিট মুল প্রাঙ্গন থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেশিরভাগ ইউনিট চলে যাচ্ছে। তাতে এতো অল্প সময়ে সব কাজ শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না তার। তাছাড়া এখনও ইউনিট বরাদ্দসহ নানা কাজই বাকী আছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, হরতাল অবরোধের কারণে নিজস্ব দোকানে যে বিক্রি হতো তা বিগত কয়েক মাস ধরে হচ্ছে না।নিজদের পুঁজি ভেঙ্গে খেতে হচ্ছে এখন। আর এর উপরে শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনন্যা প্রকাশনী থেকে এবারের বই মেলায় নতুন বই আসছে প্রায় ৭০টি। এর মধ্যে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের লেখা- সামাজিক ব্যবসা, নাসির উদ্দীন আহমেদের আমার ব্যাংকিং জীবন কিছু স্মৃতি কিছু কথা, ড. মুনতাসীর মামুনের লেখা ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী-৩য় খণ্ড ভালো সাড়া পড়বে বলে মনে করেন প্রকাশক মইনুল হক।
তিনি জানান, জানুয়ারি মাস থেকে এই ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। আর এই ব্যস্ততা এখন অনেক বেশি। বিভিন্ন বইয়ের লেখকদের ফোন আর কাজ নিয়ে হাপিয়ে উঠেছেন বলে জানান তিনি।
তবে প্রচ্ছদ শিল্পের বড়ই অভাব বলে জানান তিনি। তার সঙ্গে প্রুফ রিডারসহ দক্ষ শ্রমিকের অভাবে কাজ সম্পন্ন করতে সময় বেশি লাগছে বলেও জানান তিনি।
মেলায় আসা দর্শনার্থীর উপর রাজনৈতিক কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না তিনি। এবার নতুন ভেন্যু হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কি হবে তা জানেন না তিনি। তবে তিনি আশাবাদী।
কথা হয় কাটাবনের মধ্যমা প্রকাশনীর সঞ্জয় গাইনের সঙ্গে। তিনি অর্থসূচককে জানান, এবার মেলায় তার প্রকাশনী হতে নতুন তিনটি বই প্রকাশ হচ্ছে। মেলায় নতুন বইয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি। তিনি মনে করেন এবারও বই মেলাতে দর্শকদের উপচেপড়া ভীড় থাকবে।
বইপ্রেমী মানুষগুলো সব বিভেদ ভুলে প্রতিবছরই মেলাকে সরগরম রাখেন। এবারও পুরো মাস জুড়ে মেলা প্রাঙ্গণ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা থাকবে বলেও আশা করেন তিনি।
এক মেলার কাজ শেষ না হতেই আবার শুরু হয় পরবর্তী নতুন মেলার কাজ। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এই কাজের চাপ বাড়ে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক সব বাঁধা পেরিয়ে বই মেলা জমে উঠবে বলে মনে করেন দিন-রাতে চলা এই না ঘুমানো মানুষগুলোর।