
সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত রাজনৈতিক অস্থিরতা বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপক ক্ষুন্ন করেছে।ফলে বাংলাদেশ এখন হরতাল, সহিংসতার দেশ হিসেবে বহিঃবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। তারা এ পরিস্থিতি দ্রুত কাটিয়ে উঠে দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীর কাছে এ দাবি করেন।
নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইসিসিআই)-এর সভাপতি বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাংলাদেশ বলতে তারা এখন সহিংস জাতি হিসেবে দেখছে। তাই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য বহিঃবিশ্বের দেশগুলোর সাথে ব্যবসায়ী এবং সরকার থেকে বৈঠক করা দরকার বলে মনো করেন তিনি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান বলেন, ‘রাজনীতির কারণে দেশ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরিবেশ, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রনালয়কে এক সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।’
তার মতে আমদানি রপ্তানিকে আরও গতিশীল করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে চার লেনে উন্নিত করার কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। ভবিষ্যতে গ্যাস সংকটের কথা চিন্তা করে এর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
ওষুধ শিল্প পার্ক উদ্বোধন ও পুরানো ঢাকা থেকে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত স্থানান্তর করার জোর তাগিদ দেন তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সভাপতি মোরশেদ মুরাদ বলেন, ‘এক সময় চট্টগ্রাম ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক সমৃদ্ধ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি হয়ে গেছে ঢাকা কেন্দ্রীক। ফলে চট্টগ্রাম হয়ে পড়েছে অবহেলিত।তিনিও দ্রুত ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কাজ শেষ করার আহবান জানান।’
এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি এ.কে আজাদ বলেন, গত ৫ মাস ধরে চলা রাজনেতিক অস্থিরতায় দেশে বিনিয়োগ মারাত্নকভাবে কমে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়ছে। ইতোমধ্যে এ তারল্যের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত গ্যাস সংযোগ বৃদ্ধি করা জরুরি বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের রপ্তানি বাড়ছে কিন্তু অভ্যন্তরীন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে যেসব পণ্য প্রচুর উৎপন্ন হয় সেসব পণ্য অবাধে দেশের মধ্যে প্রবেশ করছে। এর জন্য একটা সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
এফবিসিসিআই-এর বর্তমান সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারত ব্যবসায়ীকভাবে উন্নত দেশ। তাদের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। তারা আমাদের বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে এটা আমাদের জন্য ভালো খবর।
ভারতের মতো অন্যান্য প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বাণিজ্যিকভাবে মিরাকেল একটা দেশ। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা রাজনৈতিকভাবে মডেল না হতে পারলেও বাণিজ্যিকভাবে বহিঃবিশ্বে ঠিকই মডেল হতে পেরেছি বলে তিনি জানান।
ইপিবি ও বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শীদি বলেন, ২০১৩ সালে পোশাক খাতের কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনায় বহিঃবিশ্বে আমাদের সুনাম মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ সুনাম ফিরিয়ে আনতে জোর তৎপরতা নিতে হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান ৭৫ শতাংশ। তার মতে আরও সুবিধা পেলে এ খাত ১০০ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে। তবে এ জন্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রত্যাহার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা বাতিল হওয়ায় প্লাস্টিক শিল্পের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। প্লাস্টিক শিল্পের উন্নয়নে আলাদা প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আপনারা আমাদের কাছে যে দাবি করেছেন তা সবই আমাদের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের জন্য সহায়ক। তাই আপনাদের এসব দাবি বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।
এ সময় তিনি ধ্বংসাত্নক কর্মসূচি পরিহার করায় বিরোধীদলকে ধন্যবাদ জানান।