

পুরোদমে চলছে বই মেলার প্রস্তুতি। ঠক ঠক খট খট শব্দে চলছে কাজ। আবেগ-উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসায় ফেব্রুয়ারির বই মেলাকে সাজাতে ব্যস্ত এখন মেলা সংশ্লিষ্টরা।
বাংলা একাডেমী সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ২৪৫ টি প্রকাশনীকে ৪১৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১৩১টি প্রতিষ্ঠানকে এক ইউনিটের স্টল, ৮৩ টিকে দুই ইউনিটের স্টল এবং ৪৮টি প্রকাশনীকে ৩ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে একাডেমী।
এদিকে বাংলা একাডেমীর প্রত্যাশিত স্টলের মধ্যে এক ইউনিটের সরকারি স্টল ৮টি ও শিশুতোষ প্রকাশনা ৮টি, দুই ইউনিটের স্টলে সরকারি ৫টি ও শিশুতোষ প্রকাশনা ২টি এবং তিন ইউনিটের ২টি স্টল সরকারকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গত বছর বই মেলাতে ২৪৬ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৪১৮টি ইউনিট বরাদ দেওয়া হয়। সরকারি ও অন্যান্য ২৮টি প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪২ টি ইউনিট।
শিরিন, সদর, বুক্স ফেয়ার, ধ্রুপদ, চয়ন, অন্যধারা, আদর্শ, আল-আমিন, বৈশাখী, বেঙ্গল, পাঠশালা, পঙ্খিরাজ, মেলা, প্রিয়মুখ, গাজী, মনন, রুপ, কলি, আলপনার মতো নানা প্রকাশনী এবারও বই মেলাতে স্টল বরাদ্দ নিয়েছে।
গত বছর ৪৫টি লিটল ম্যাগাজিনকে তাদের প্রকাশনা প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য স্থান করে দেওয়া হয় লিটল ম্যাগ চত্বরে। তবে এবার তাদের স্থান মুল ভবনের সামনে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই পর্যন্ত লিটল ম্যাগাজিনের জন্য ৫০টি আবেদন জমা পড়লেও তা চুড়ান্ত হয়নি।
এবার মেলাতে এক ইউনিটের জন্য টাকা জমা দিতে হচ্ছে ৭ হাজার ৩১৫ টাকা, দ্বৈত ইউনিটের জন্য দিতে হচ্ছে ১৬ হাজার ৭২০ টাকা ও তিন ইউনিটের জন্য প্রকাশকদের জমা দিতে ২৭ হাজার ১৭০ টাকা।
কথা হয় কাটাবনের মধ্যমা প্রকাশনীর সঞ্জয় গাইনের সঙ্গে। তিনি অর্থসূচককে জানান, এবার মেলায় তার প্রকাশনী হতে নতুন তিনটি বই প্রকাশ হচ্ছে। তিনি মনে করেন এবারও বই মেলাতে দর্শকদের উপচে পড়া ভীড় থাকবে।
পুরো মাস জুড়ে মেলা প্রাঙ্গণ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা থাকবে বলেও আশা করেন তিনি। বইপ্রেমী মানুষগুলো সব বিভেদ ভুলে প্রতিবছরই মেলাকে সরগরম রাখেন।
বাংলা একাডেমীর গণসংযোগ কর্মকর্তা সাদিয়া খাতুন অর্থসূচককে জানান, মেলার কাজ চলছে পুরোদমে। আমরা আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো।
তবে এবার সরকারি প্রকাশনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মূল প্রাঙ্গনের মধ্যে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য পাবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, বইমেলায় সকল মানুষ যাতে নিরাপদে আসতে পারে এর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা বরাবরের মতো জোরদার করা হবে। এর পাশাপাশি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য এবারো থাকছে একাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা।
তিনি বলেন, এবার ফায়ার ব্রিগেড, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঢাকা সিভিল সার্জন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাব, আনসার, ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করবেন বলেও জানান তিনি।
গত বছর বইমেলায় ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি হয়েছিল। আর বাংলা একাডেমী যথারীতি ৩০ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করেছিল। এবারও এমন ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
গত বছর প্রথম ২৭ দিনে নতুন বই এসেছিল ২৯৬৩টি। আলোচ্য সময়ে বাংলা একাডেমী ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৭৮০ টাকার বই বিক্রি করেছিল। এই সময়ে মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১০কোটি ১৪ লাখ ৭৩ টাকা।
গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে গন্থমেলায় আগুন লেগে বেশ কয়েকটি স্টল পুড়ে যায়। এতে ২২টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও ২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ভস্মিভূত হয়। এসময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও ৩টি প্রতিষ্ঠানের বই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এবার বাড়তি মেলায় অগ্নি নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।