
দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে রডের দাম। তিন মাসের ব্যাবধানে সব ধরনের রডের দাম বেড়েছে টন প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামালের দাম ও জাহাজ ভাঙ্গা লোহার দাম বৃদ্ধিসহ রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন সংলিষ্টরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে টন প্রতি ৪৮ থেকে ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। গত তিন মাস আগে অর্থ্যাৎ অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এ গ্রেডের রডের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪১ হাজার টাকা। দুদিন আগেও এ রডের দাম ছিল ৪৬ হাজার থেকে ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি টন।
অক্টোবর মাসে ৬০ গ্রেডের প্রতিটন রড ৫০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতো। এখন সেই রড টন প্রতি টন প্রতি ৬১ হাজার থেকে ৬২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ।
চট্টগ্রামে মেসার্স মৌলানা ট্রেডিংয়ের রডের খুচরা ব্যবসায়ী নুরে আলম বলেন, রডের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। গেল তিন মাস আগে যেখানে ৪০ গ্রেডের রড বিক্রি হতো ৪১ হাজার টাকা প্রতি টন এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকা দরে। ৬০ গ্রেডের যে রড বিক্রি হতো ৫০ হাজার টাকা প্রতিটন তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬১ থেকে ৬২ হাজার প্রতি টন। গেল কয়েক মাসে রডের দাম টন প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই এর চাহিদা কমছে বলে জানান তিনি।
রি-রোলিং মিল মালিকরা বলছেন, হরতালের কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া, শিপ ইয়ার্ডে পুরাতন জাহাজ ভাঙ্গা কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রডের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাছাড়া ব্যাংক সুদ ও গ্যাস সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বছরে দেশের রডের চাহিদা প্রায় ৪০ লাখ টন। চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ পূরণ হয় পুরাতন জাহাজ ভাঙ্গার লোহা থেকে । পুরাতন জাহাজের লোহার দাম টন প্রতি প্রায় ৭ শতাংশ বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে এ শিল্পে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের ১৫০ টির মতো রোলিং মিল এবং ২৫ টি অটো স্টিল মিল রয়েছে। এসব মিলের মাধ্যমে দেশের মোট ৪০ লাখ টন রডের চাহিদা পূরণ করে। যার প্রধান কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হয় বিলেট ( খনি থেকে আহরন করা আকরিক লোহা কে প্রক্রিয়া করে বিলেট করা হয়) এবং স্ক্র্যাপ(পুরাতন জাহাজ ভাঙ্গা লোহা)। দেশের চাহিদার প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ টন রডের চাহিদা পূরণ করে বিলেট এবং বাকি ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন পূরণ করে স্ক্র্যাপ। তাই দেশের রডের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পুরাতান জাহাজ আমদানি এবং তার ভাঙ্গা লোহার (স্ক্র্যাপ) দামের উপর নির্ভর করে রডের দাম।
এদিকে রডের দাম বাড়ার কারণে আবাসন খাত ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে মনে করছেন এসব খাতে জড়িতরা। তারা দাবী করছেন কিছু মিথ্যা অজুহাতে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে রি-রোলিং মিলের মালিকরা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ঠিকাদার সমিতির রায়হান উদ্দিন বলেন, এসময়টিতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সব ধরনের নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ বেশী থাকে। তাই এসময়টিকে কাজে লাগিয়ে তারা রডের দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে পুরাতন জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের মালিকরাই রি-রোলিং মিলের মালিকদের সাথে সরাসরি জড়িত থাকে। আবার কখনো দেখা গেছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প ও রি-রোলিং মিলের মালিক পক্ষ একই থাকে । পুরাতন লোহার দাম বাড়ার অজুহাতে তারা রডের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে সরকারকে হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মনে করেন তিনি।