অনুমোদনের পর কাজ এগোয়নি নতুন বিমা কোম্পানিগুলোর

Idra+bia-Logo

Idra+bia-Logoগত মহাজোট সরকারের আমলে অনুমোদন পাওয়া ১৭ নতুন বিমা কোম্পানি কার্যত এখনও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে আছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোনো কোম্পানিই এখনও সেভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি। দুএকটিতে যা-ও কাজ শুরু হয়েছে তা-ও কেবল কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঘিরে। এ পরিস্থিতির জন্য অবশ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক না পাওয়া, দক্ষ জনবলের অভাব, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা না পাওয়ার হতাশা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা মনে করেন, বর্তমানে যে বিমা কোম্পনিগুলো আছে তা চালানোর মতো দক্ষ লোক নেই। তারপরও আরও নতুন কোম্পানি অনুমোদন দিয়ে এ সংকটকে আরও গভীর করেছে।

নতুন প্রবিধানমালা-২০১৩ গেজেট: নতুন বিমা কোম্পানি অনুমোদন দেওয়ার উদ্দেশ্যে গত বছর ১০ ফেব্রুয়ারি বিমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা-২০১৩ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের পর ওই বছর ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নতুন বিমা কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়। এরপর পরবর্তীতে তিন দফা সময় বাড়িয়ে ১৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে মোট ৭৭টি আবেদন জমা পড়ে। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে গত ৪ জুলাই আইডিআরএ প্রাথমিকভাবে ১১টি নতুন বিমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়। এরমধ্যে নয়টি জীবন বিমা ও দুইটি সাধারণ বিমা কোম্পানি। দ্বিতীয় দফায় আবারও অনুমোদন দেওয়া হয় পাঁচটি কোম্পানিকে।

নতুন বিমা: নতুন অনুমোদন ও লাইসেন্স পাওয়া বিমাগুলো হচ্ছে- সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স, জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রটেকটিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সামিট ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্বদেশ লাইফ ইনস্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্স ও ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স, শিকদার এবং সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটিড।

বিমাগুলোর উদ্যোক্তা: জানা গেছে, প্রথম দফায় লাইসেন্স পাওয়া সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির অন্যতম উদ্যোক্তা রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। নতুন লাইসেন্স পাওয়া এই কোম্পানিতে রূপালী ইনস্যুরেন্সেরও মালিকানা রয়েছে।
চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। ইউনিক হোটেলের প্রতিনিধি হিসেবে এই বিমা কোম্পানিতে আরও আছেন ব্যবসায়ী নূর আলী।
আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফরিদুন্নাহার লাইলী পেয়েছেন জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম. নাসির উদ্দিন নতুন অনুমোদন পাওয়া মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অন্যতম উদ্যোক্তা। গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তারা হচ্ছে ব্র্যাক ফাউন্ডেশন, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, স্কয়ার গ্রুপ এবং এপেক্স গ্রুপ। পরিচালক হিসেবে রয়েছে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও স্যামুয়েল এইচ চৌধুরীর নাম।
বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক। মোশাররফ হোসেন (নামক একজন হিসাববিজ্ঞানী) এই কোম্পানির পরিচালক।

প্রটেকটিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অন্যতম উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম। পরিচালক রয়েছেন চট্টগ্রামভিত্তিক ক্রিস্টাল গ্রুপের মালিক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোরশেদ মোরাদ ইব্রাহীমের ভাই রাশেদ মোরাদ ইব্রাহীম এবং ফুটবল ও ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত।
জাপানি কোম্পানি তাইও এবং স্থানীয় সামিট গ্রুপকে যৌথভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাইও-সামিট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নামে। সামিট গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান এবং এশিয়ান ফার্নিচারের মালিকানা রয়েছে এতে।
এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আহাদকে। এ  পরিচালক রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা মোস্তফা আজাদ চৌধুরী ও গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজুল বারী চৌধুরী।
নতুন অনুমোদন পাওয়া দুটি সাধারণ বিমা কোম্পানির মধ্যে একটিতে মালিকানা রয়েছে শিকদার গ্রুপের। মমতাজুল হক শিকদার ও জয়নুল হক শিকদারের পাশাপাশি মিরপুরের সাংসদ আসলামুল হক এবং মেজর জেনারেল (অব.) বিজয় কুমার সরকার এই কোম্পানির পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। অন্যটি হচ্ছে সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

এদিকে, দ্বিতীয় দফায় লাইসেন্স পাওয়া পাঁচটি কোম্পানি হলো- তালিকা অনুযায়ী, রাজশাহী-৬ আসনের সাংসদ শাহরিয়ার আলম সুপারিশে আলফা ইসলামী লাইফের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আর কর্ণধার হলো তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীর নাজিমউদ্দিন আহমেদ । আর স্বদেশ লাইফের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীকে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের সুপারিশে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা জাকের আহমেদ ভূঁইয়াকে। আর যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের জন্য সুপারিশ করেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে ভৈরবের সাংসদ নাজমুল হাসান। এটি দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওয়ামী লীগের সাংসদ মোশাররফ হোসেন। এ ছাড়াও ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নাকে।

নতুন বিমা কোম্পনির শাখার আবেদন: আইডিআর সূত্র জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি কোম্পনি শাখা খোলার জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে সোনালি লাইফের সাতটি ও বেস্ট লাইফ ইন্সেরেন্স করেছে দুটির জন্য আবেদন।

নতুন ব্যবসয়ীক কর্যক্রম শুরু করেনি ছয়টি কোম্পানি: আইডিআর সূত্রে জানা গেছে, নতুন অনুমোদন পাওয়া ১৬ বিমা কোম্পানির মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়টি কোম্পানি তাদের ববসায়ীক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এদের মধ্য প্রথম দফায় অনুমোদনের মধ্য রয়েছে জাপানি কোম্পানি তাইও এবং স্থানীয় সামিট গ্রুপকে যৌথভাবে লাইসেন্স পাওয়া তাইও-সামিট ও দ্বিতীয় দফায় অনুমোদনের পাচঁটি কোম্পানি।

আগের বিমা কোম্পানির সংখ্যা: নতুন কোম্পনিগুলো অনুমোদন দেয়ার আগে ৬২টি কোম্পানি নিয়ে ছিল বিমা খাত। এর মধ্য বেসরকারি পর্যায়ে  ৪২টি সাধারণ বিমা, জীবনবিমা ১৭টি, সরকারি সংস্থা দুটি—সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন এবং মেটলাইফ অ্যালিকো নামে রয়েছে একটি বিদেশি জীবনবিমা কোম্পানি।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: অনুমোদন পাওয়া বিমা কোম্পানিগুলো এখনো কেন কাজ শুরু করতে পারেনি এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও সন্ধানি লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্থসূচককে বলেন, ব্যবসা শুরু করার জন্য যে ধরনের যোগ্য জনবল প্রযোজন সে ধরনের জনবল নেই । যার কারণে তারা এখনো ব্যবসা শুরু করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, এমনকি আগের অনেক কোম্পনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই। আর নতুন কোম্পানি পাবে কোথায়। অন্যদিকে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা।

অন্যদিকে, এ বিষয়ে শিকদার ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিকুর রহমান অর্থসূচককে বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমরা শাখার জন্য আবেদন করিনি। আপাতত কেন্দ্রীয় কার্যলয় কেন্দ্রীক ব্যবসায়ী কার্যক্রম শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, গতকাল মন্ত্রী সভার শপথ হয়েছে। দেশ এখন একটু শস্তির ভিতর ফিরবে। এখন আমরা ব্যবসায়া প্রশার কারার জন্য আইডিআরএ আবেদন করবো।