
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা কারীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। স্থগিত আসনে নির্বাচন প্রস্তুতির বৈঠক শেষে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যারা সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করছে তারা সন্ত্রাসী, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। কোনভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। তারা যেখানে থাকুক খুঁজে বের করতে আইন শৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তবে এই সময় নির্বাচনী এলাকাসহ সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সেনামোতায়েনের বিষয়ে সিইসি বলেন, ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের বাজেটে এবং প্রয়োজনে মাঠে ছিল। এখন কোথাও থাকলে তা তাদের শীত কালীন মহড়া।
তবে নির্বাচনী এলাকায় সেনা বাহিনী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে। তবে সরকার চাইলে যে কোনো সময় সেনা মোতায়েন করতে পারে।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, মাস্তান, অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কারও বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বৈঠকে আইন শৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
৫ জানুয়ারির ধারাবাহিকতায় নির্বাচনী এলাকায় শান্তি শৃংখলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান আনসার সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে মোবাইল টিমের দায়িত্বে থাকবে পুলিশ।
ভোটদানের জন্য ভোটারগন যাতে নির্বিগ্নে ও স্বাচ্ছন্দে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, সে জন্য নিশ্চিয়তামূলক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর ভ্রাম্যমান ইউনিটসমূহ কাজ করবে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং যে কোন প্রকার অশুভ কার্যকলাপ প্রতিরোধে সজাগ থাকতে আইনশৃংখলাবাহিনীকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ৬ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা তাদের এলাকা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার অভিযান, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং প্রার্থীদের নানা অনিয়ম প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনের দিক নির্দেশনা চান।
কার্যপত্র অনুযায়ী প্রতি কেন্দ্রে ১০ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সহ ২৫ দায়িত্ব পালন করবে। তবে এবার ৫ জানুয়ারির চেয়ে অধিক গুরুত্ব এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১৬ জানুয়ারি ৬ জেলার ৮টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। ৩৯২ কেন্দ্রে ভোটারেরা ভোট প্রদান করবেন।
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রতি দশ কেন্দ্রের জন্য ৪৩ জন সশস্ত্র বাহিনী, তিন কেন্দ্রের জন্য ১৩২ জন পুলিশ সদস্য, ৫ কেন্দ্রের জন্য ৮২ জন র্যাব সদস্য এবং ১০ কেন্দ্রের জন্য ৪৩ জন করে বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।
৫ জানুয়ারির ধারাবাহিকতায় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটিকে সহায়তা করতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হবে। যারা নির্বাচনী অপরাধ খতিয়ে দেখবে। আট আসনের নির্বাচনে বিচারিক দায়িত্বে থাকবেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গঠিত সমন্বয় সেল এবারও কাজ করবে। এতে পুলিশ, আনাসার, বিডিআর, সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার একজন করে প্রতিনিধি থাকবে। যারা ভোটগ্রহণের আগে থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা সমন্বয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় ও ইসির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, অর্থমন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালক-বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এনএসআই, এসবি, ডিজিএফআই ও র্যাব, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পুলিশ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, উপ মহাপরিদর্শক (সংশ্লিষ্ট চার রেঞ্জ), ৬ ডিসি (সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা), ৬ জেলা পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, পরিচাল, আনসার ভিডিপি (সংশ্লিষ্ট চার রেঞ্জ), সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।