কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কাটখালে সাড়ে চারশত বছর আগে নির্মিত দিল্লির আখড়াটি অযত্ন, অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে এই আখড়াটি নির্মিত হয় বলে জানা গেছে। ঐতিহাসিক এ আখড়াটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজন সেখানে ছুটে যান।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্বদিকে হাওড় এলাকা মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নে এ আখড়াটির অবস্থান। কথিত আছে নারায়ন গোস্বামী নামে এক সাধুর অলৌকিক ক্ষমতার কথা জেনে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর নারায়ন গোস্বামীকে ৩৭২ একর ভূমি দান করে। এরপর সেখানে আখড়াটি গড়ে ওঠে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের দেয়া জমির উপর আখড়াটি নির্মিত হওয়ায় সেটির নামকরণ করা হয় দিল্লীর আখড়া হিসেবে। বর্তমানে সেখানে তিনটি মন্দির ও তিনটি পুরাতন মঠ জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রধান মন্দিরটির রং করা হলেও তার বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বহুদিনের পুরোনো মন্দিরগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে আখড়াটিকে ঘিরে একটি সুবিধাবাদী চক্র গড়ে উঠেছে। ওই চক্রটি ইতোমধ্যে আখড়ার ১৪০ একর ভূমি জবর দখল করে নিয়েছে। তারা আখড়ার ভূমি দখল করে সেখানে ঘর তৈরি করে লোকজনের বসতি স্থাপন করেছে বলে জানা গেছে। আখড়ার সেবায়েত নারায়ন দাস জানান, এর ভূমি অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তবে বর্ষাকালে আখড়ায় সুবিশাল পুকুর ও চারপাশে সারি সারি হিজল গাছ পানির উপর দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। তাই মোঘলদের ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসেবে দাড়িয়ে থাকা দিল্লির আখড়াকে এক নজর দেখতে আসেন বিভিন্ন এলাকার লোকজন। তারা এসে অনেকটাই যেন বিপাকে পড়ে যান। তাছাড়া আখড়ার কোনো দালিলিক বই না পেয়ে ও আখড়ার দুরাবস্থা দেখে অনেকেই আবার হতাশ হন।
সংবাদকর্মী এম আসাদুজ্জামান জানান, দিল্লীর আখড়াটি দিন দিন তার গৌরব হারাচ্ছে। তিনি এটিকে সংস্কার করার জোর দাবি জানিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি আবু খালেদ পাঠান বলেন, আখড়ায় গেলে সেটির ইতিহাস সংক্রান্ত কোনো দালিলিক বই পাওয়া যায়নি। সেটি লজ্জার কথা। সরকারের উচিত আখড়ার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা বলে তিনি জানান।
জেলা পরিষদ প্রশাসক ও মিঠামইন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান দিল্লির আখড়া অযতেœ ও অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রতœতত্ব বিভাগের উচিত এ ব্যাপারে এগিয়ে এসে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করা।
সাকি/