পাঁচ জানুয়ারি শেষ হলো দেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অনির্বাচিত কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না বলে বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থান এবং প্রধান বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জনের কারণে কার্যত এটি ‘এক দলীয়’ নির্বাচনে পরিণত হয়। নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী হন ১৫৩ জন। আর বাকিরা ভোটের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৩২ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।
নির্বাচনের দিন সরকারের নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে সক্রিয় থাকার পরেরও দেশের বিভন্ন স্থানে ঘটে ব্যপক সহিংসতার ঘটনা। নির্বাচন বিরোধীরা তাদের পূর্ব ঘোষিত নির্বাচন প্রতিরোধর অংশ হিসেবে প্রায় চার শতাধিক ভোট কেন্দ্রে হামলা চালায়। আগের রাতে জ্বালিয়ে দেয় শতাধীক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভোট প্রতিরোধের নামে বিরোধী জোটের এই সহিংস কর্মকাণ্ড রুখে দিতে আইন প্রয়োগকারীরাও কঠোর হয়ে ওঠে। সরকার সর্মথক, নির্বাচন বিরোধী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষে সোমবার পর্যন্ত দেশে নিহত হয় ২৬ জন।
নির্বাচনের দিন থেকে আজ পর্যন্ত দেশের নানা স্থানে বিশেষ করে যশোর ও দিনাজপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালায়। ভাঙচুর চালায় তাদের বাড়িঘরে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ওই সব এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি।
এদিকে নির্বাচনের দিনই ১৮ দলীয় জোট আবারও হরতালের ডাক দেয়। চলমান অবরোধ কর্মসূচির সাথে এই হরতালে দেশবাসীর সর্বাত্বক সমর্থনও চায় জোটটি।
তবে সরকার এই অবরোধ হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় তাদের প্রতি। সরকার দলীয় অনেক নেতা হুশিয়ারি করে বলেন হরতাল-অবরোধের নামে জানমালের ক্ষতি করা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
নির্বাচনের আগে অর্থমন্ত্রী সিলেটের এক জনসভায় বলেন, নির্বাচনের পরে সরকার আরো কঠোর হবে। হরতাল-অবরোধের নামে কোনো ধরনের সহিংসতা সরকার বরদাস্ত করবে না।
যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বিরোধী দলের আন্দোলনের যোগ্যতা নেই উল্লেখ করে সহিংসতা বর্জনের আহ্বান জানান।
বিরোধী নেতাদের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের ট্রেন মিছ করেছে। এখন যদি তারা এই অজুহাতে সহিংসতা করে তবে জান মালের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার হার্ড লাইনে যাবে।
স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক একই ধরনের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে নির্বাচনোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে হরতাল-অবরোধের নামে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানান।
সে সময় তিনি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘরে আগুনসহ সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, এসব সহিংসতার ব্যপারে সরকার এবার জিরো টলারেন্সে যাবে। কোনোভাবেই সহিংসতা মেনে নেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এজন্য সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর অবস্থানে যাবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর আজ মঙ্গলবার হঠাৎ করে বিএনপির ছয় নেতাকে আটক সরকারের ঘোষণার বাস্তবায়ন হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
যদিও আটক নেতার মধ্যে চার জনকে ইতোমধ্যেই ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশ বলেছে কোনো ধরনের উসকানী মূলক কথা বলে দেশে সহিংসতার চেষ্টা করা হলে তাদের সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত আজ সকালে খন্দকার মাহবুব প্রেসক্লাবে এক বক্তৃতায় খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ করে বলেন, ‘ সরকার ভয় পায়। খালেদা জিয়া রাস্তায় নামলে সারা দেশে আগুন জ্বলে উঠবে।’
মাহবুব এই বক্তৃতা দিয়ে বের হওয়া পরেই তাকে আটক করে পুলিশ। এর কিছু পরেই বারিধারা থেকে আটক করা হয় আরও পাঁচ নেতাকে।
তাই অনেকে ধারনা করছেন আজকের এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকাররের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কার্যকর হচ্ছে।