পীরগাছার ৯০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭০ ভাগের ব্যালটবাক্স ছিনিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়ায় সকাল ৯ টা পর্যন্ত সেখানে ভোট গ্রহন কার্যক্রম শুরুই হয় নি। তবে নির্বাচন অফিস বলছে ৪১ টি ভোট কেন্দ্রের কোন সরঞ্জামাদী না থাকায় সেখানে ভোট গ্রহন করা যাচ্ছে না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোররাতে আঠারো দলীয় জোট নেতাকর্মীরা দেউতি বাজারে দেউতি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ কেন্দ্র ঘেরাও করে ব্যালটবক্স ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে এনে পুড়িয়ে ফেলে। পোড়ার পর চলে যাওয়ার সময় পুলিশ অতর্কিত ভাবে আঠারো দলীয় জোট নেতাকর্মীদের উপর গুলি করে।
এতে ঘটনাস্থলেই পারুল ইউনিয়ন জামায়াতের ওয়ার্ড সভাপতি মিরাজুল ইসলাম নিহত হন। গুলিবিদ্ধ ১১ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হলে এর মধ্যে দেউতি বাজার ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি হাদিউজ্জামান হাদি মারা যান। এ ঘটনায় সেখানে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ফিরোজুল ইসলাম জানান, পুলিশ বিক্ষুব্ধ নিরস্ত জনতার উপর পাখির মতো গুলি বর্ষণ করায় আমাদের দুই ভাই শাহাদত বরণ করেছেন।
এদিকে শনিবার সন্ধা থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত পীরগাছা উপজেলার ৯০ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে মধ্যে ৬৫/৭০ টি ভোট কেন্দ্রের ব্যালট বক্স ছিনতাই করে পুড়িয়ে দেয় আঠারো দলীয় জোট নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে পীরগাছার দামুর চাকলা আবু সালেহীয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিপাল রেজি প্রাইমারী বিদ্যালয়, কান্দি ইউনিয়নের দাদন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নটাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,পশ্চিম দেবু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেক মামুদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাওটানা হাইস্কুল, পবিত্রঝাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে, নেকমামুদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালুক ইশাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেএন উচ্চ বিদ্যালয়সহ ২১ টি ভোট কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়াও ছাওলা ইউনিয়নের সবকটি ভোট কেন্দ্রের ব্যালট বক্স ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে এনে পুড়িয়ে দেয় আঠারো দল নেতাকর্মীরা। ফলে পীরগাছায় ৮০ ভাগ ভোট কেন্দ্রেই ভোট গ্রহন বন্ধ রয়েছে।
তবে পীরগাছা উপজেলা নির্বাচন অফিসার সেলিম হোসেন জানান, ব্যালটবক্স ছিনতাই, অগ্নিসংযোগ এর কারনে ৪১ টি ভোট কেন্দ্রের ভোট গ্রহন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা জানান, কল্যাণী এবং পারুল ইউনিয়নের ১০/১২ টি কেন্দ্র ছাড়া কোথাও ভোট গ্রহন হচ্ছে না। সব জায়গা থেকেই নির্বাচন সংক্রান্ত লোকজন উপজেলায় চলে গেছেন।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিয়া ফেরদৌস জাহান জানান, পীরগাছায় ব্যালট বক্স ছিনতাই ও এবং কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় অন্য সেন্টারগুলোতে বাড়তি নিরাপত্বা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে না সেখান থেকে আনসার এবং প্রিজাইটিং অফিসার সহকারী প্রিজাইটিং ও পোলিং অফিসারদের উপজেলায় নিয়ে আসা হয়েছে। সার্বিকভাবে পুরো উপজেলায় আইনশৃংখলাবাহিনীর নজরদারী ও টহল বাড়ানো হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা জামায়াত আমীর আব্দুল মোত্তালেব জানান, পীরগাছায় প্রহসেনর ভোট গ্রহন প্রতিহত করে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এদিকে এই আসনের কাউনিয়া উপজেলার ৭০ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫ টির ব্যালট বক্স ছিনিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে আঠারো দল। এরমধ্যে টেপামধুপুর চরগোনাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনসার প্রিজাইটিং অফিসারদের মারধোর করে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এসময় সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৮ রাউন্ড গুলি করে। এতে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হন।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার আইনুল হক জানান, ব্যালট বক্স ছিনিয়ে নেয়ায় চরগোনাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহন বন্ধ আছে।
কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, কাউনিয়ার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।