
তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মামলায় সিআইডির প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ ও অস্পষ্ট বলে অভিযোগ করলেন জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে তাজরিন গার্মেন্টসসহ তোবা গ্রুপের শ্রমিক রক্ষা কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এ সময় তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সিআইডির প্রতিবেদন সম্পর্কে বাহারান বলেন, ফ্যাক্টরি কারা এবং কিভাবে আগুন লাগানো হয়েছে এ বিষয়ে সিআইডির প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট কোনো কথা বলা হয় নি। এছাড়া, ফ্যাক্টরির আগুন নেভানো শেষ হলে যখন প্রতিটি ফ্লোর থেকে অগ্নিদগ্ধ লাশ বের করা হয় তখন সেনা কর্মকর্তা ও ফায়ার এন্ড সেফটি কর্মকর্তাগণ ফ্লোরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা কোনো কোনো ফ্লোরের গেইটে তালা আটকানো দেখেছেন। কিন্তু পরে লাশগুলো তালা ভেঙ্গে রেব করা হয়েছে না কি তালা কেটে বের করা হয়েছে তাও সিআইডির প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয় নি।
শ্রমিক নেতা বাহারান আরও বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনার সময় মালিকের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিচালক শাহজাহান ফ্যাক্টরিতে উপস্থিত থাকলেও তার বিষয়ে সিআইডির প্রতিবেদনে কোনো তথ্য উঠে আসে নি। এ সময় সিকিউরিটি ইনচার্জ সুজন হাওলাদার ও শ্রমিক সোহেল রানা উপস্থিত থাকলেও ঘটনার পর থেকে তারা দুইজনই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সিআইডির প্রতিবেদনে এদের বিষয়েও কোনো তথ্য আসে নি। তাই পুরো ঘটনার তথ্য সম্পর্কে এখনও আমরা অনেক কিছুই জানি না।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের এই নেতা বলেন, এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সিআইডির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তোবা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ কারণে তোবা গ্রুপের ৯টি সচল ফ্যাক্টরি বন্ধ হতে চলেছে। এ কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সেগুলোতে কর্মরত পাঁচ হাজার শ্রমিক চাকরি হারাবে। ফলে তাদেরকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্যাক্টরিতে দুর্ঘটনা ঘটলে শুধু মালিককে দায়ী বলা চলে না। কারণ এর সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে কিন্তু সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত না করেই মালিককে দোষী করা হচ্ছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে মালিক দোষী হলে আমরা তার সবোর্চ্চ শাস্তি দাবি করছি। আর ঘটনায় জড়িত না থাকলে তাকে হয়রানি না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এ সময় বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ-সম্পাদক মঈন উদ্দিন মন্ডল বিল্ডিং কোড সম্পর্কে বলেন, বিল্ডিং কোড সঠিক দেখেই ইন্সপেক্টর লে-আউট প্লান করে দেওয়ার পরই ফেক্টুরী চালু হয়। আর যদি এ লে-আউট প্লান সঠিক না হয়ে থাকে তাহলে ফেক্টুরী ইন্সপেক্টর এ হতাহতের দায় এড়াতে পারে না ।
তিনি বলেন, তাজরিন ফ্যাশনে আগুনের ঘটনার মামলায় আসামি হয়ে ফ্যাক্টরির মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার নিখোঁজ রয়েছেন ফলে গার্মেন্টেসে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন ও চাকরির নিশ্চয়তা হুমকির মুখে পড়েছে।
ফ্যাক্টরির মালিকের নামে মামলা হওয়ার কারণে তিনি পলাতক রয়েছেন। আর এ কারণে শ্রমিকদের চাকুরী অনিশ্চয়তায় পড়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, মালিক দেলোয়ার হোসেন যদি প্রকৃত দোষী হয় তাহলে তার উপযুক্ত বিচার হোক অন্যথায় তাকে মামলা থেকে রেহাই দিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হোক।
অনুষ্ঠানে তাজরিন গার্মেন্টসসহ তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে ফ্যাক্টরির কোয়ালিটি ইনচার্জ ফাতেমা তোবা গ্রুপের ৯টি ফ্যাক্টরি চালু রেখে প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত পাঁচ হাজার শ্রমিকের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন তোবা গ্রুপের শ্রমিক রেহেনা, মর্জিনা, সজল, কান্ত প্রমুখ।
জেইউ/এএস