
এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, ত্রিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে, এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ, পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক। এটি পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘কবর’ এর অংশ বিশেষ। ‘পল্লী কবি’ জসীম উদ্দিন ১৯০৩ সালের এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন। আজ কবির ১১১তম জন্ম বার্ষিকী।
আজকের এই দিনে কবির জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানার অম্বিকাপুরে কুমার নদীর পাড়ে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। এই বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ‘জসীম মেলা’ পিছিয়ে গেছে। তবে আজও কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অসংখ্য মানুষ হাজির হয় কবির বাড়ি।
কবির পুরো নাম জসীম উদ্দীন মোল্লা। ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সালে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আর এর মধ্যে তিনি রেখে গেছেন অনেক অসাধারণ কৃতিত্ব।
তিনি রচনা করে গেছেন নকশীঁ কাথার মাঠ, রাখালী, মা যে জননী কান্দে, সোজন বাদিয়ার ঘাট, ডালিমকুমার, চলে মুসাফির ইত্যাদি অসংখ্য অসাধারণ রচনা।
তিনি ১৯৫৮ সালে ‘প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরমেন্স’ পুরস্কার লাভ করেন । তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন ১৯৭৬ সালে, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার অর্জণ করেন ১৯৭৮ সালে (মরণোত্তর), ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি অর্জণ করেন ১৯৬৯ সালে।
তার বাবার বাড়ি ছিলো একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে ‘রাঙাছুট। জসীম উদ্দীন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে পড়ালেখা করেন। এখান থেকে তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সালে উত্তীর্ণ হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়র থেকে বি. এ. এবং এম. এ.শেষ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সালে। ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারি পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে তার নিজ গ্রাম বিমলগুহে সমাধিস্থ করা হয়।
এমআরবি/এএস