
বাংলাদেশের নির্বাচনী অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা যেভাবে চলছে তা অব্যাহত থাকলে ২০১৪ সালে দেশ একটি মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
শনিবার গুলশানের লেকশর হোটেলে সিপিডি, আইন ও শালিস কেন্দ্র, সুজন এবং টিআইবির যৌথ উদ্যেগে আয়োজিত ‘সংকটে বাংলাদেশ-নাগরিক ভাবনা শীর্ষক আলোচনা শেষে এ কথা বলেন তিনি।
ড.দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের ধারা দুর্বল হয়ে গেছে। গত দুই বছর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কম হওয়ার কারণে সরকারিভাবে বিনিয়োগ করে তা পুশিয়ে নেওয়া হয়েছে।তবে এবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা যাওয়ায় সরকারি বিনিয়োগ তেমন একটা হওয়ার সম্ভবনা নেই। তাই এবার সরকারি ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই পতন ঘটবে। এজন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান সংকটের কারণে বিদেশি সাহায্য অনেক কমে গেছে। এবার প্রথম চার মাসে মাত্র ৬ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি সাহায্য এসেছে। যা গত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৩৬ কোটি ডলারে। বিদেশি সাহায্য না থাকায় এডিপি বাস্তবায়নেও পড়তে হবে ভয়াবহ সমস্যায়। এবার প্রথম চার মাসে এডিপির মাত্র ১৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
দেবপ্রিয় আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙা করার আরেকটি প্রধান মাধ্যম প্রবাসী-আয় (রেমিট্যান্স) । কিন্তু এ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম। এর অন্যতম কারণ, জুলাই-অক্টোবর মাসে জনশক্তি রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ২১ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রায় টাকার বিনিময় হার শক্তিশালী হওয়ায় অনেক অনাবাসী হয়তো ব্যাংকের মাধ্যমে উপার্জিত টাকা পাঠাতে অনুৎসাহী হচ্ছেন। আবার কেউ হয়তো দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিদেশে টাকা রাখাটাই শ্রেয় মনে করে থাকতে পারেন। এমনটা হলে কিছু দিনের মধ্যেই ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ কমতে থাকবে। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার আরেকটি প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসলেও এ সময়ে এ খাতে ১০ শতাংশ ভর্তুকি দিতে হয়েছে। আর ধারাবাহিক দুর্ঘটনা ক্রেতাদের বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। যা আমাদের জন্য আরেকটি অশনি সংকেত।
এদিকে দেশের প্রধান আয়ের উৎস রাজস্ব খাতের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশি সাহায্য, বৈদেশিক রেমিটেন্স ও পোশাক শিল্পে হতাশার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বছরের প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা কম হয়েছে। রাজস্ব আদায় এভাবে কমে থাকতে তা অর্থনীতির ব্যষ্টিক পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন কর্মসংস্থান দূরের কথা, এই মুহূর্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিবে। হরতাল-অবরোধে নিয়ত আয় হারাচ্ছেন দিনমজুরেরাও। ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর। আর তা অব্যহত থাকলে আগামি ২০১৪ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি স্বল্পমেয়াদি সংকট থেকে মধ্যমেয়াদি সংকটে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, যত দিন পর্যন্ত আমরা একটি আস্থাভাজন নির্বাচনব্যবস্থার অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান না করতে পারছি, তত দিন দেশে শান্তি ও স্বস্তি ফিরবে না। তাই দেশের সম্ভবনাকে রক্ষায় এবং অর্থনীতির ক্ষতি ঠেকাতে দ্রুতই একটি সমাধানে পৌঁছতে হবে।
এইউ নয়ন/এআর