মশহুরুল হুদার ৫ দিন ব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল মাইম ওয়ার্কশপ

  • Emad Buppy
  • December 26, 2013
  • Comments Off on মশহুরুল হুদার ৫ দিন ব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল মাইম ওয়ার্কশপ

1382976_603072179755510_716624170_n-1মার্চে দেশে আসছেন দি আমেরিকান নিউ মাইম অ্যান্ড মুভমেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক মূকাভিনেতা কাজী মশহুরুল হুদা। দেশে এসে তিনি মাইম ওয়ার্কশপসহ একটি মূকাভিনয় প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন। ৫ দিন ব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল মাইম ওয়ার্কশপ ২০১৪ এর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হুদা মাইম ক্লাব।

বাংলাদেশ হুদা মাইম ক্লাবের পাবলিক রিলেশন অফিসার সোহাগ আশরাফ জানান, এ ওয়ার্কশপটি আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হুদা মাইম ক্লাব। আগামি বছরের ১৩, ১৪, ১৬, ১৭ ও ১৮ মার্চ ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ার্কশপ হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকায়।

তিনি আরও জানান, ইন্টারভিউর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচিত করা হবে। যারা এ ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক তাদেরকে এসএমএস করতে বলা হয়েছে। এসএমএস করার নিয়ম- অংশগ্রহণকারীর নাম # (স্পেস) মোবাইল নম্বর # (স্পেস) বিভাগ। এরপর পাঠিয়ে দিন ০১৬৭৪-০৭৬৪৭৯ এই নম্বরে।

ওয়ার্কশপ এর পাশাপাশি মার্চেই বাংলাদেশ হুদা মাইম ক্লাব আয়োজন করতে যাচ্ছে মূকাভিনয় প্রতিযোগিতা ২০১৪।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের মূকাভিনয় জগতের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম একজন পাইওনিয়ার কাজী মশহুরুল হুদা। তিনি একজন আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং মাইম এম্বাসেডর অব বাংলাদেশ নামে সুপরিচিতি।

প্রায় দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মি: হুদা মূকাভিনয় চর্চার মাধ্যমে শুধু পারফরমার হিসাবে নয়, গবেষক হিসাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে মূকাভিনযে উদ্ভাবন ও ডেভলপমেন্ট করেছেন। মাইম আইকন শুধু মূকাভিনয় জগতেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইয়োগা টেকনিক ডেভলপার, হলিউডে হুদাইয়োগা নামে নিজেস্ব ইয়োগা স্টাইল প্রতিষ্ঠা করেছেন।

১৯৫৬ সালে ১৩ ডিসেম্বর যশোরের ঝিকরগাছায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। পিতা মরহুম ডা : নুরুল হুদা ও মাতা মাজেদা খাতুন। ঝিকরগাছার কপতাক্ষ নদের টায়রা বেড়ে ওঠে তার শৈশব জীবন। ঝিকারগাছা হাইস্কুল থেকে এস এস সি এবং ঝিকারগাছা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন।

ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান থেকে বি এস সি (অনার্স) এবং এম এস সি করেন। ছোটবেলা থেকেই কাজী মশহুরুল হুদা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। শুধু তাই নয়, আবিস্কার ও উদ্ভাবনের প্রচেষ্টায় তার উদ্ভাবিত সয়েল পেইন্ট প্রথম বাংলাদেশ সাইন্স ফেয়ারে সাইন্স মিউজিয়াম কর্তৃক প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল।

বাংলাদেশের থিয়েটার কর্মী হুদা ১৯৭৫ সনে আমেরিকান মুকাভিনেতা এডাম দারিউসের মূকাভিনয় তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয় ও অনুপ্রানিত করে এবং সম্পুর্ণ নিজেস্ব প্রচেষ্টায় মূকাভিনয় জগতে প্রবেশ করেন এবং বাংলাদেশে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশে মুকাভিনয়কে সুপরিচিত করে তোলেন। টিভি ও মঞ্চের পারফর্মেন্সের মাধ্যমে তিনি নিজেকে দর্শকদের কাছে নিয়ে যান খুবই অল্প সময়ে।

বাংলাদেশের প্রথম ড্রামা স্কুল (নাট্যচক্র ড্রামা স্কুল) থেকে প্রথম ড্রামা সাটিফিকেট প্রাপ্ত ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে প্রথম ড্রামা ওয়ার্কশপ করেন। অতি অল্পসময়ে জনাব হুদা বাংলাদেশের মুকাভিনয় জগতে প্রচার ও প্রসার লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সহায়তায় স্কলারশিপ নিয়ে মূকাভিনয়ের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য আমেরিকায় যান।

১৯৮৬ সালে ভ্যানকুভারের ওয়াল্ড এক্সপোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাইম এন্ড মুভমেন্ট ফেস্টিভলে মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করার মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল ব্যক্তিতে পরিনত হন।

হুদামাইম লস এঙ্গেলেসে ১৯৮৫ সনে নিউ এজ মাইম থিয়েটার গঠনের মাধ্যমে নতুন ধারায় মূকাভিনয় চর্চা শুরু করেন এবং নতুন যুগের মূকাভিনয় সৃষ্টিতে নিজেকে নিয়জিত করেন। পাশাপাশি অনুন্নত দেশের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্ট্রিট মাইমের সাথে ইমপ্রভায়জেশনের সংযোজন ঘটিয়ে গ্রামীন মূকাভিনয় নির্মান করেন।

2১৯৯৩ সালে ক্যালিফর্নিয়ায় হিপনোসিস মোটিভেশন ইনস্টিটিউট থেকে হিপনোথেরাপির উপর গ্রাজুয়েশন করার পর তিনি হিপনোথেরাপিস্ট হিসাবে গবেষণার মাধ্যমে মাইম এবং থেরাপির সংযোগ ঘটিয়ে মূকাভিনয় জগতে মাইমথেরাপির উদ্ভাবন করেন। যা মানুষের কল্পনা শক্তি প্রসারিত, মানসিক স্বনির্ভরতা গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যবহারিক পরিবর্তন আনার প্রদ্ধ্তিগত প্রক্রিয়ার প্রবর্তন করেন।

মাইমথেরাপির মাধ্যমে হুদামাইম মূকাভিনয় শিল্পকে মেন্টাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট এডুকেশনে পরিনত করে মিডিয়ার সন্মান বৃদ্ধি ও শিক্ষার নতুন দিগন্ত সৃস্টি করেছেন। এখন মুকাভিনয় শুধুমাত্র বিনোদন নয়, দৈহিক ও মানসিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের সাথে সম্পক সৃষ্টির পথ তৈরী করেছেন হুদামাইম। অভিনবত্ব ও সৃষ্টিশিলতায় মূকাভিনয় জগতে হুদা বেস্ট পারফরমারই নন, একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত। শুধু তাই নয়, তিনি মূকাভিনয়ের পাশাপাশি ইযোগা সাইন্স নিয়ে গবেষণা করে নিজেস্ব স্টাইল এবং দৈহিক এলাইনমেন্ট টেকনিকের উদ্ভাবনে স্ট্রেস ও পেইন ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া ডেভেলপ করেছেন।

কাজী হুদা শিল্প, সাহিত্য ও সংষ্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার নাট্যচক্রের নাট্যকর্মী হিসাবে স্বাধীনাতাত্তর নাট্ট্য আন্দোলনের একজন সক্রিয় নাট্য ব্যক্তি ছিলেন। তত্কালীন বাংলাদেশের আবৃত্তি শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অগ্রণী ভুমিকা ছিল। প্রবাস জীবনে মি : হুদা প্রফেশনাল শিল্প কর্মের পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ কাজ করেছেন।

তিনি বই শোন সংস্থা গঠন করে সিডিতে বাংলা সমগ্র উপন্যাসকে পাঠ করেন অনং স্বকন্ঠে ৩০ পারার কোরআনের বাংলা অনুবাদ রেকড করে ক্যাসেট প্রকাশ করেন। ৮০ দশকের শেষের দিকে তিনি প্রথম লস এঞ্জেলেসে বাংলা পাঠশালা তৈরী করে প্রথম জেনারেশনদের বাংলা শিক্ষা চালু করেন। হলিউডে প্রথম প্রহরে একুশ উদযাপনের প্রথম উদোক্তা ছিলেন।

শিল্পী হুদা কমিউনিটি একটিভিস্ট হিসাবে লস এঞ্জেলেসে “লিটল বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ ইউনিটি ফেডারেশন অব লস এঙ্গেলেসের ভাইস প্রেসিডেন্টয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

বতমানে রাইটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ক্যালিফর্নিয়া’র প্রেসিডেন্ট ও bangladeshusanews24.com ইন্টারন্যাশনাল অনলাইন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। মশহুরুল হুদা’র কৃতকর্মের সাফল্যে বিভিন্ন সময়ে অগনিত পুরোস্কার পেয়েছেন।

ডালাস ও লস এঙ্গেলেস মেয়রের কাছ থেকে রিকগনিশন পুরস্কার গ্রহণ করেন। ক্যালিফর্নিয়ার লোটাস ফেস্টিভাল হুদার শিল্পকর্মের জন্য পুরস্কার প্রদান করে। এছাড়া ফোবানা (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ এসোসিয়েশন নর্থ আমেরিকা), বাফলা (বাংলাদেশ ফেডারেশন অব লস এঙ্গেলেস) এবং নর্থ আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলন, ফ্রেন্ডস ক্লাব অব লস এঙ্গেলেস সহ অসংখ্য পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের কৃর্তীমান মূকাভিনেতা ও বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যাক্তি প্রবাসে এবং স্বদেশে মানুষের কল্যাণে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে যাছেন। তিনি বাংলাদেশের মুকাভিনয় শিল্পকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিল্পকলার সহায়তায় প্রবাস থেকে নিয়মিত ওয়ার্কশপ করেন। একুশ শতকের নতুন যুগের মূকাভিনেতা কাজী মশহুরুল হুদা লস এঙ্গেলেসে দ্যা নিও মাইম এন্ড মুভমেন্ট থিয়েটার এবং হুদা ইয়োগা ইনস্টিটিউট পরিচালনা করেন ও স্বদেশে ‘বাংলাদেশ হুদামাইম ক্লাব’ গঠন করেছেন।

মুকাভিনয় শিল্পকে দেশে ও বিদেশে অবদান সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে তার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।