
কথা ছিলো চলতি বছর অক্টোবর মাসেই রাজধানীতে নতুন ৫ শ ট্যাক্সিক্যাব চলাচল শুরু করবে। কিন্তু তা আর হয়নি। নভেম্বরের শেষ দিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান ওই সকল ট্যাক্সি ক্যাবের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। তবে সেই অনুমোদন এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং জানুয়ারিতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আরও ১১০০ টি ট্যাক্সি ক্যাব।
আর এমন হলে নগরীর কোথাও দেখা যাবে না এ পরিবহন সার্ভিসটি। আর এ কারণে বেকার হয়ে যাবে এ পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত চলমান প্রায় আড়াই হাজার চালক। সেই সাথে ভোগান্তিতে পরতে হবে নগরবাসীকে।
এই অবস্থায় সমালোচনার মুখে পরেছে বিআরটিএ। ঢাকা মহানগর ট্যাক্সি ক্যাব (লীজ) মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. সারওয়ার বিআরটিএর সমালোচনা করে বলেন, বর্তমানে চলাচলরত ট্যাক্সি ক্যাবের সংখ্যা যাত্রীর চাহিদার তুলনায় খুবই কম। অথচ বিআরটিএ কতৃপক্ষ বিগত ৩-৪ বছর ধরে এই শিল্প আধুনিকায়ন ও সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ট্যাক্সি হিসেবে ৬০০০ টির নতুন রেজিষ্ট্রেশন প্রদানের চেষ্টা অব্যাহত রেখে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সরকার নতুন ট্যাক্সি ক্যাব আমদানি করার পূর্বে পুরাতন ১১ হাজার রেজিষ্ট্রেশনকৃত ট্যাক্সি ক্যাবের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ না নিয়ে নতুন আমদানির নামে নগরীতে ট্যাক্সি ক্যাব শূণ্য করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আর এর ফলে গণপরিবহন সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি বেকারত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে যা মানবিকতার পরিপন্থি।’
এদিকে রাস্তায় ক্যাব সংকটে বিরক্ত সাধারণ যাত্রীরাও। মতিঝিলে দীর্ঘ সময় ক্যাবের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা দীপন তার বিরক্তি প্রকাশ করলেন। তার মতে সাধারণ যাত্রীদের কথা বিবেচনা না করে সরকার এক তরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন।
তবে আরেক যাত্রী হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানের যে সেবা তার চাইতে নতুন ভাবে আসাই ভালো।
সারওয়ার অর্থসূচককে জানান, ১৯৯৭ সালের ট্যাক্সি ক্যাব নীতিমালা অনুযায়ী নগরীতে ট্যাক্সি ক্যাবের সংখ্যা রয়েছে ১১ হাজার ২শ ৬০টি। বর্তমানে এ পরিহনের সংখ্যা ১৮ হাজার। পরে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন ২০১০ নীতিমালা অনুযায়ী আরও ৬ হাজার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী কাগজে-কলমে ট্যাক্সির সংখ্যা ১৮ হাজার থাকলেও বর্তমানে সচল রয়েছে ১১শ ট্যাক্সি ক্যাব। এ ছাড়া বর্তমানে ৬ হাজার ৭শ নতুন ট্যাক্সি ক্যাব রোড পারমিট পাওয়ার কথা থাকলেও নীতিমালা জটিলতার কারণে ক্যাবগুলো লাইসেন্স পাচ্ছে না।
তবে নতুন ক্যাব নামানোর আগ মূহূর্ত পর্যন্ত ১১শ টি ক্যাবের রোড পারমিট বাড়ানোর জন্য আবেদন সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।
সারোওয়ার বলেন, নগরীতে এখন অনেক ইজি বাইক চলছে। এসব ইজি বাইকে প্রতিদিন প্রায় হাজার থেকে ১ হাজার ২শ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। কিন্তু এসব ইজি বাইক রাস্তায় চলচলের জন্য সরকারকে কোনো ট্যোক্স দেয় না। কিন্তু ট্যাক্সি ক্যাব প্রতিনিয়ত সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি ধনী পরিবারে ৫-৬ জন লোকের জন্য ৩-৪ টি প্রাইভেট কার থাকে। জনপ্রতি একটি কার ব্যবহার করে। আর একজনের জন্য গাড়িটি রাস্তায় থাকে। কিন্তু ট্যাক্সিক্যাব রাস্তায় থাকলেও প্রতিটি ক্যাব দৈনিক প্রায় ২০-২৫ জন যাত্রী বহন করে। ফলে রাস্তায় যানজট নিরসনেও এ পরিবহনটি সহায়তা করে।
এ ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে ট্যাক্সিক্যাব মালিক-শ্রমিক ঐক্যৈ পরিষদের সদস্য সচিব মো. ওবায়দুল হক অর্থসূচককে জানান, ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ২ কোটি জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে যাত্রী সেবার জন্য বিভিন্ন গণপরিবহন বিআরটিএ কতৃপক্ষ তথা সরকার কতৃক অনুমোদিত আছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত জোট সরকারের পলিসি অনুযায়ী ৪০ হাজার ২ ষ্টোক বেবী ট্যাক্সি পরিবেশ দূষনের অযুহাতে ফেজ আউট এবং নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের অযুহাতে ৩ হাজার মিশুকের পরিবর্তে সিএনজি চালিত ৪ ষ্টোক থ্রি হুইলার অটো রিক্সা প্রতিস্থাপনের নামে চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সরকার পর্যায়ক্রমে পরিবেশবান্ধব ১৩ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ১১ হাজার ট্যাক্সি ক্যাব রেজিষ্ট্রেশন পূর্বক চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের পরিবহন নিয়ন্ত্রন কতৃপক্ষ বিআরটিএ এর সঙ্গে গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কতৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা এবং নীতিমালা অনুযায়ী নীতিগত সহায়তা না পাওয়ার কারণে ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিসে ধস নেমে এসেছে। তাই এই শিল্প আজ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। আর এর ফলে যাত্রীরা পড়েছে চরম ট্যাক্সি ক্যাব সংকটে।
নানা কারণে এ পরিবহনটির সংখ্যা কমে গিয়ে এখন সচল ট্যাক্সি ক্যাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১শতে উল্লেখ করে্ ওবায়দুল হক বলেন, তবে এর মধ্যে আবার সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামি ১লা জানুয়ারী থেকে বাংলাদেশের কোথাও এ পরিবহনটির চলাচলের অনুমতি থাকবেনা।
সরকার সুকৌশলে এ পরিবহন শিল্পের চাকা পুরোপরি বন্ধ করে দেওয়ার পায়তারা করছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ শিল্পের সাথে জড়িত লক্ষাধিক পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একমাসেরও বেশি সময় ধরে অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। তবে কোনো যুক্তিতে সরকার অর্থনীতির এ ধ্বংসাত্বক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা আমরা জানি না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীন বলেন, ১১ হাজার ২৬০টি ট্যাক্সিক্যাবের লাইসেন্সের বৈধতার মেয়াদ আগামি ৩১ শে ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এ পরিবহন সার্ভিসের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়নি। আর এ মেয়াদ বাড়ানো না হলে এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় দেড় লাখ পরিবারের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
এ সময় তিনি বলেন, রাস্তায় সার্জেন্ট ও পুলিশের অহেতুক হয়রানি বন্ধ না করলে পুলিশি দুর্নীতি ক্রমশ বাড়তে থাকবে। আর এ দুর্নীতির শিকার হবে রাস্তার এসব পরিবহণ শ্রমিকরা। সেই সঙ্গে রাস্তায় গাড়ি জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
তবে এ ব্যপারে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জেইউ/