
বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা এবং হরতাল-অবরোধে পরিস্থিতি দিন দিনই ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে হতাশা আর শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সবজি ব্যবসায়ীরা। শীতকালীন শাক-সবজিসহ বিভিন্ন কাঁচা পণ্যের উৎপাদন বেশি থাকলেও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হরতাল-অবরোধ।
আর এ কারণে ব্যবসায় দেউলিয়া হওয়ার কথা জানালেন অনেকেই। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে না বলে আশঙ্কা তাদের।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বলা মুশকিল দেশ কোন দিক এগোচ্ছে। সবার মনে শঙ্কা হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেশ যেমন পিছিয়ে পড়ছে, তেমনি অর্থনীতির মেরুদণ্ডও ভেঙে পড়ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন এভাবে চলতে থাকলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে কয়েক শ বছর পিছিয়ে যাবে।
ব্যবসা-পাতি কেমন চলছে- এ বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর শান্তিনগর, মতিঝিল এজিবি কলোণী, যাত্রাবাড়ী, কাওরান, কাপ্তান বাজার, ফকিরাপুলের কয়েক জন কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের সাথে। আলাপকালে তাদের চোখে-মুখে ভেসে ওঠে হতাশা আর আশঙ্কার ছাপ।
বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের দুই জোটের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পিষ্ট হচ্ছে এদেশের সাধারণ মানুষ। তারা এই ধরনের সহিংসতা ও অবরোধ চান না। তারা দেশের প্রধান দুই নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেন একটা সুষ্ঠু সমাধানে এগিয়ে আসেন।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, অবরোধের কারণে মাল আসতে পারছে না। পণ্যবাহী গাড়ি আগে যেখানে ১০টা আসতো সেখানে এখন আসছে ৩ থেকে ৪টি গাড়ি। তাছাড়া ভাড়া যেখানে আগে ছিল ১০ হাজার টাকা সেখানে সেটা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা ।
ফকিরাপুলের সবজি ব্যবসায়ী মো.হাবিবুর রহমান বলেন, “বর্তমানে বাজার যেভাবে চলতাছে, তাতে সামনে যদি অবস্থা আরো খারাপ হয়, তাইলে আমরা খুব বেকায়দায় পইরা যামু। গাড়ি যদি না চলে, এইভাবে যদি হরতাল-অবরোধ আসতেই থাকে, তাইলে ঢাকা শহরের অবস্থা খুবই খারাপ অইয়া যাইব।”
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “গাড়ি না আইলে মাল আইব না। আর মাল না আইলে একটা বড় ক্ষতি অইয়্যা যাইব। তাছাড়া কাচামাল পইচা নষ্ট হইয়া যাইব।”
তিনি বলেন, “সবজি পইচা গেলে বড় লোকসানের মধ্যে পইরা যামু। যেইভাবে দেশ চলতাছে মনে অইতাছে আমাগো ব্যবসা-পাতি সব বন্ধ কইরা দিতে অইব।
তিনি বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করছি। গরীব মানুষ নিজের টাকা নাই পরের টাকায় ব্যবসা করি। সবজি বেচতে না পারলে যে লোকসান হয় তা পুষিয়ে নেয়া সম্বব না।
শ্যাম বাজারের পাইকারী বিক্রেতারাও একই ধরনের আশঙ্কার কথা বলেছেন। সব বিক্রেতরাই বলছেন, এভাবে রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে দেশের ক্ষতি হোক, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হোক সেটা কাম্য নয়। অচিরেই এর থেকে বের হতে হবে, সমাধানে আসতে হবে।
আজিমপুর বাজারের ক্রেতা বুয়েট কলেজের ছাত্র সাইফুল ইসলাম আকাশ তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা তো সাধারণ পাবলিক। ভোটের রাজনীতির কারণে আমরাও এক ধরনের পণ্য। তবে নির্বাচনের পরপর যখন ভোট দেওয়া শেষ তখন আমরাও যে কাঁচা পণ্য হয়ে যাই। আমরা পঁচে যাই। আমাদের আর মূল্য থাকে না। আমাদের অবস্থা এখন তাই।
কোনাপাড়া বাজারে বাজার করতে আসা রোকনুজ্জান ও আহমেদ কবির বলেন, বাজারের অবস্থা বলে কি লাভ। দাম তো শুধু বাড়েই। শীত আসলেও, বাজারে নতুন নতুন শাক-সবজি উঠলে হরতাল অবরোধের কারণে বাজার উর্ধ্বমুখী। সব তো পাবলিকের পকেট থেকেই যায়।
এআর