
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে শিল্প বিনিয়োগ। ভবিষ্যত নিশ্চিত না হয়ে ঝুঁকি নিতে চান না ব্যবসায়িরা। তারা ঋণ না নেওয়ায় ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য (নগদ অর্থ) বেড়েই চলেছে। ঋণ দিতে না পারায় এ খাতে আয় না থাকলেও আমানতকারীদের ঠিকই সুদ দিতে হচ্ছে।এ কারণে তারল্য যত বাড়ছে, ব্যাংকের দায়ের বোঝাও তত ভারী হচ্ছে।
গত এক মাসে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। নভেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৭৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংকের শরীয়াহ শাখায় জমা উদ্বৃত্ত নগদ অর্থের পরিমাণ ৯ হাজার ২০৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে ব্যাংক ব্যবস্থায় প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং সেপ্টেম্বর শেষে ৭২ হাজার কোটি টাকার তারল্য উদ্বৃত্ত ছিলো। আর নভেম্বরে শেষে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৭৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। প্রতি মাসেই ব্যাংক ব্যবস্থায় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা তারল্য উদ্বৃত্ত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর কাছে সামগ্রিকভাবে নগদ অর্থ রয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৭২৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে হিসেবে ব্যাংকিং খাতে মোট অর্থের ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশই উদ্বৃত্ত তারল্য।
প্রচলিত বিধি মোতাবেক প্রত্যেক তফসিলি ব্যাংককে তাদের মোট পুঁজির ১৯ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদে এবং বন্ড আকারে জমা রাখতে হয়। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮১ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো গড়ে ৭১ দশমিক ২৮ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারছে। ফলে তারল্যের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে মোট বিনিয়োগের সিংহভাগ আসে ব্যাংক ব্যবসা থেকে। গ্রাহকের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে অলস টাকার পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো আমানত নিরুৎসাহিত করতে আমানতে সুদের হার কমিয়ে দিচ্ছে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করে থাকে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট তথা দুর্বল অবকাঠামোয় কার্যত দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। এতে করে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহের পাহাড় জমছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থসূচককে বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকমুখী হচ্ছেন না। এ ছাড়া দেশের অবকাঠামো সুবিধার অভাব, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে ব্যাংকে বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের পরিমাণ বাড়ছে। এ উদ্বৃত্ত তহবিল ব্যাংকগুলোর মুনাফায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে তিনি জানান।