ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি নিয়ে আতঙ্ক

বাহারি ডিজাইনের স্যুয়েটার পড়ে বিশেষ ভঙ্গীমায় একটি ইউরোপিয় ফ্যাশন হাউজের তিন মডেল। ইউরোপের বাজারে স্যুয়েটার, ওভেন শার্ট, নিট পোশাকসহ নানা ধরনের পোশাক রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশের কারখানাগুলো
বাহারি ডিজাইনের স্যুয়েটার পড়ে বিশেষ ভঙ্গীমায় একটি ইউরোপিয় ফ্যাশন হাউজের তিন মডেল। ইউরোপের বাজারে স্যুয়েটার, ওভেন শার্ট, নিট পোশাকসহ নানা ধরনের পোশাক রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশের কারখানাগুলো

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি হারানোর পর এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি হারানোর আতঙ্ক পেয়ে বসেছে দেশের রপ্তানিকারকদের। তাদের আশংকা ব্শে কয়েকটি বিষয় ইইউকে জিএসপি বাতিলের সিদ্ধান্তে উৎসাহী করে তুলতে পারে। কারণগুলোর  মধ্যে রয়েছে-প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান,রাজনৈতিক অস্থিরতায় পোশাক খাতের কমপরিবেশ ও নিরাপত্তার উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে না পারা নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সঙ্কট।

ইইউতে জিএসপি সুবিধা হারালে দেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে পারে বলে তাদের আশংকা।কারণে একক অঞ্চল হিসেবে ইইউই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৬০ ভাগ আসে এ অঞ্চল থেকে।

২০১২-১৩ অর্থ বছরে ইউরোপের বাজারে ১২৫৬ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা মোট রপ্তানির ৫৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক ৫১৭ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ও নীট ওয়ার পোশাক ৭৩৯ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।

জিএসপি বাতিল হলে ওই বাজারে ৬০ শতাংশ বা ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা।

গত এপ্রিলে বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পর নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ জুনে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি বাতিলে রপ্তানি বাণিজ্যে তেমন নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণ দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতো না।

কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে জিএসপির গুরুত্ব অনেক বেশি। ইইউতে অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে জিএসপি পায় বাংলাদেশ। মূলত জিএসপি সুবিধার উপর ভর করে ওই অঞ্চলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বাতিলের পর পরই ইইউ’র জিএসপি নিয়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে ইইউ ট্রেড কমিশনারসহ ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে, যুক্তরাষ্ট্রর সিদ্ধান্তে তারা উদ্বুদ্ধ হবেন না। অর্থাৎ সহসাই তারা জিএসপি বাতিল করবেন না। তবে একই সঙ্গে তারা সরকার ও পোশাক শিল্প মালিকদের সতর্ক করে বলেছে, জিএসপি কোনো চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। তৈরি পোশাক শিল্পের কাজের পরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যর্থ হলে তারা কঠোর সিদ্ধান্তের পথে যেতে বাধ্য হতে পারেন। আর কিছু দিনের মধ্যেই জিএসপির ইস্যুটি পর্যালোচনা করা হবে। ঘোষণা অনুসারে,আগামি বছরের জুলাই মাসে এ পর্যালোচনা বৈঠক হওয়ার কথা। তবে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তার আগেই ইইউ এমন কঠোর কোনো সিদ্ধান্তের দিকে যায় কি-না সে আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে ব্যবসায়ীদের।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে,২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে ওভেন ও নীট ওয়ার মিলে পোশাক ৭২১ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য কিনেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৭১৯ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার।২০১০-১১ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ১০৫১ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার।এর পরের বছর ইউরোপীয় ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে বেশি পোশাক কিনে ১১৩৭ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের। যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৫৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম অর্থসূচককে জানান,ইউরোপীয় জিএসপি বাতিল হলে পোশাক খাত অপূরণীয় ক্ষতি মুখে পড়বে।এই খাতে ৬০ শতাংশ রপ্তানি কমে যাবে বলে জানান তিনি। কারণ জিএসপি বাতিল হলে ইইউতে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাবে। তাতে ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি কমে যেতে পারে। তবে এই মহূর্তে জিএসপি বাতিলের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।

অবশ্য শহীদুল্লাহ আজীম মনে করেন, কমপ্লায়েন্স ইস্যুর পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নিয়ে সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষ ও দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয় ইইউ গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে।

পোশাক খাতের অন্য সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি বাতিল হলে পোশাকখাত ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে চলমান পরিস্থিতি জিএসপি পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি।