
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা,সংঘাত-সংঘর্ষে ধস নেমেছে দেশের পর্যটন শিল্পে। পর্যটনের ভর মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবনসহ দেশের শীর্ষ পযটন এলাকাগুলোতে এখন খাঁ খাঁ শূন্যতা। নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিদেশি পর্যটক তো আসছেই না, দেশের ভ্রমণপিপাসুরাও ঘরের বাইরে পা ফেলছেন না। ফলে সবগুলো পর্যটন এলাকা এখন পর্যটক শূণ্য। আবার পর্যটক না থাকায় সংশ্লিষ্ট পেশার লোকজনের উপস্থিতিও নেই বললে চলে।
দেশের প্রধান পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে রাজনৈতিক অস্থিরতার ছাপ সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে যেন কালেভদ্রে কোনো পর্যটকের দেখা মেলে। পর্যটক না থাকায় হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউজগুলোকে বিপুল লোকসান গুণতে হচ্ছে। লোকসানের ধকলে বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস। আরও দুই শতাধিক বন্ধের উপক্রম হয়েছে। টানা অবরোধের কবলে পড়েছে পর্যটন শহরের আধার বার্মিজ মার্কেটগুলো।
সৈকত পাড়ের বিপনীবিতানগুলোরও একই অবস্থা। পোশাকের দোকান থেকে শুরু করে প্রসাধনীর দোকান, গহনা, জুতা ও ফাস্টফুডের দোকান কোনওটিই বাদ নেই। একই সঙ্গে কপাল পুড়েছে ফুটপাতের দোকানগুলোর। দিনের পর দিন দেখা মিলছে না ক্রেতাদের। অনেকটাই অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। খরচ কমানোর জন্য চলছে কর্মী-ছাঁটাই।
হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস এর মতো পর্যটন স্পট গুলোও করুন দশা। পুরোপুরি ফাঁকা দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের বালুকাবেলা। সৈকতের লাবণী পযন্ট,সীগাল,সী ইন পযন্ট,লংবীচ পযন্ট,পর্যটন শৈবাল পযন্ট,ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে কলাতলি সুইটিস ফিঙ্গার পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে হাজারো কিটকট ছাতা-চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। বীচে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও কাটাচ্ছে অলস সময়। একইভাবে পর্যটন স্পট দরিয়া নগর,হিমছড়ি ঝর্ণা,পাথুরে বীচ ইনানী,সেন্ট মার্টিন,মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির,সোনাদিয়ার অবস্থাও করুণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক পার্কের অবস্থা আরো বেদনা দায়ক বলে জানিয়েছেন বনবিভাগ।
সৈকত বার্মিজ মার্কেটের কয়েকটি দোকানের সেলসম্যান জানান, অবরোধের কারণে বেচা-বিক্রি নেই। স্টাফদের খরচ মেটানোই কঠিন। তাই মালিক স্টাফ কমিয়েছেন। সামনে এ অবস্থা চলতে থাকলে মনে হয় স্টাফ আরও কমানো হবে।
কয়েকজন সেলসম্যান আরো জানান, যা বিক্রি হয় তাতে দোকান ভাড়া ও স্টাফদের খরচ মেটানোই সম্ভব নয়। ২৬ দিনের মাসে দোকান ভাড়া, স্টাফদের বেতন মিলে অনেক টাকা খরচ হয়। এ অবস্থায় কোনও ভাবেই চলার উপায় নেই। একই অবস্থা শহরের হাজেরা শপিং, কোরাল রীফ, নিউ মার্কেট, বানু প্লাজা,চৌধুরী বার্মিজ মার্কেট, বড় বাজার সমবায় সুপার মার্কেটসহ আরো ৬/৭ টি অভিজাত বিপনীবিতানে এবং সৈকত পাড়ের বিভিন্ন মার্কেটের দোকানিদের অবস্থা একই রকম। কেউ পেপার পড়ে সময় পার করছেন, আবার কেউ গল্প করে। ক্রেতাদের কোনও দেখা নেই। তারা আরো জানান, দোকান খোলার কথা ১০টায়। অথচ অবরোধের কারণে দোকান খুলতে হয়েছে ২টার পরে। খোলার পর বসে-বসে সময় পার করছেন। ক্রেতার কোনও খোঁজ নেই।
একই অবস্থা চট্টগ্রাম,রাঙামাটি ও বান্দরবনেও।এদের অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে কক্সবাজারের চেয়েও শোচনীয়। সিলেট-মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতেও এখন আর পর্যটকের পা পড়ছে না।
টুরস অপারেটরস অব বাংলাদেশের পরিচালক এবং টুরিস্ট গাইড এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম বুলু বলেন, আমরা যারা পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা কারণে পর্যটন খাত হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, পর্যটন খাতের ব্যবসা ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্রমন কার্যক্রম বাতিল হয়ে গেছে। আমরা আমাদের কর্মচারিদের বেতন ঠিকমত দিতে পারছিনা। আমাদের অবস্থা এখন পথে বসার মত হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি না হলে এ থেকে বের হয়ে আসার কোন বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
গ্যালাক্সি হলিডেজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক গোলাম কাদের অর্থসূচককে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের ব্যবসা করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ ভাগ বুকিং বাতিল হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার জানান, কক্সবাজারে প্রতিটি হোটেলে রুম বুকিং বাতিল হয়েছে, হচ্ছে।