
রেকর্ড করলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বৃহস্পতিবার প্রথম বারের মতো রিজার্ভের পরিমাণ এক হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৫ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২১ অক্টোবর রিজার্ভ এক হাজার ৭০০ কোটি ডলার অতিক্রম করে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে। এ রিজার্ভ দিয়ে ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। রিজার্ভে সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থান আছে।
ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির বিবেচনায় বর্তমান মজুদ স্বস্থিদায়ক হলেও এ মজুদ আরো বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার যথেষ্ট মজুদ একদিকে যেমন দেশের উন্নততর সার্বভৌম রেটিং প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারে অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ আকর্ষণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা পূর্বের তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক লিখিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত নানাবিধ কার্যক্রমের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকিং পথে রেমিটেন্স পাঠানোকে উৎসাহিত করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউজ প্রতিষ্ঠা ও ড্রয়িং এরেঞ্জমেন্ট এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম বেগবান করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
রপ্তানিকারকদেরকে প্রদত্ত প্রণোদনার ফলে রপ্তানি আয় জুলাই-অক্টোবর সময়ে পূর্বের একই সময়ের তুলনায় ১৬.৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য রপ্তানির উপর নগদ সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের পরিমান ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছে এবং বিকেএমইএ, প্লাষ্টিক ইন্ডাষ্ট্রিজ, প্যাকেজিং ইন্ডাষ্ট্রিজ, টেক্সটাইল ইন্ডাষ্ট্রিজ, সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রিজ এবং গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ইন্ডাষ্ট্রিজ-ভূক্ত প্রতিষ্ঠানসমুহকে এ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এ তহবিলের আওতায় খুবই কম সুদে পুনঃঅর্থায়নে সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া, এ তহবিলের আওতায় পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে একক ঋণ গ্রহীতার ঋণ সীমা এক কোটি ডলার হতে এক কোটি ২০ লাখ ডলারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা-টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকার ফলেও রপ্তানিখাত ও প্রবাসী আয় প্রেরণ উৎসাহিত হয়েছে।
বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহন অনুমোদন করায় বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ বেড়েছে।
খাদ্য উৎপাদন বিশেষত চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে চাল আমদানি করতে হচ্ছেনা। এছাড়াও, জ্বালানী তেলসহ আমদানিযোগ্য অন্যান্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হ্রাস পাওয়ায় এবং বিলাস দ্রব্যের আমদানি নিরূৎসাহিত হওয়ায় সার্বিক আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। জ্বালানী তেল আমদানি বাবদ আইডিবির ঋণ সহায়তার ফলেও আমদানি ব্যয়ের চাপ বর্তমানে হ্রাস পেয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রিজার্ভ ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর এক হাজার কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলার, ২০১৩ সালের ৭ মে এক হাজার ৫০০ কোটি (১৫ বিলিয়ন) ডলার এবং ২২ অক্টোবর এক হাজার ৭০০ কোটি (১৭ বিলিয়ন) ডলারে উন্নীত হয়েছিল।