আজ রাজশাহী মুক্ত দিবস

rajshahi

rajshahiআজ ১৮ ডিসেম্বর, রাজশাহী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহীর অবস্থা ও প্রেক্ষাপট ছিল কিছুটা ভিন্ন। তাইতো মুক্তিযুদ্ধের ক্যালেন্ডারে হিসাবের আগেই রাজশাহীতে শুরু হয় যুদ্ধ। আর বিজয়ের দুই দিন পর অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহীবাসী শত্রু মুক্ত হয়।

রাজশাহীতে স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা ওড়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দুই দিন পর। দীর্ঘ নয় মাস পর বিভীষিকাময় সময়ের অবসান ঘটে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় আর আত্মপরিচয়ের ঠিকানা করে নেওয়ার অনুভূতিতে পুলকিত হয়ে ওঠেন রাজশাহীর মানুষ। মুক্তিকামী জনতার ঢল নামে রাজশাহী শহরের প্রতিটি সড়কে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী অঞ্চল ছিল সাত নম্বর সেক্টরের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাক বাহিনী পরাজয় আঁচ করতে পেরে শুরু করে ত্রাস, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ নানা নিপীড়ন। পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমিতে হত্যা করে চার হাজার মানুষকে। দোসরদের মদদে বিভিন্ন কায়দায় লোকজনকে হত্যা করে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ফেলে দেয় পাকহানাদাররা। ২৫ নভেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুর চরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন্ত অবস্থায় বালির মধ্যে পুঁতে হত্যা করে। পরবর্তীতে একে ‘বাবলা বন হত্যাকান্ড’ নামে অভিহিত করা হয়। সবকিছু সহ্য করে স্বাধীনতার দিন গুণতে থাকেন রাজশাহীর মানুষ।

লালগোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও শেখপাড়া সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াই করে মুক্ত করে ফেলে রাজশাহীর গ্রাম অঞ্চল। মহদিপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর রাজশাহী অ্যাডভান্সের পরিকল্পনা নিলেন। ১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচরে শহীদ হন তিনি। একপর্যায়ে মুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

এরপর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী দ্রুত গতিতে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এ অগ্রগামি দল পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে সাদা পাগড়ি ও আত্মসমর্পণের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীর দর্পে ঢোকে। স্বজন হারানোর কষ্ট আর স্বাধীনতার উল্লাসে গোলাপজল, ফুলের পাপড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-মিত্রবাহিনীকে বরণ করে নেয় রাজশাহীবাসী।

১৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়ে যায় রাজশাহী। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলেন লাল গোলা সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। পরে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী ছেড়ে চলে যায় নাটোরে। রাজশাহীর অবরুদ্ধ মানুষ মুক্ত বাতাসে নেমে আসে বহুল কাঙ্খিত মুক্তির স্বাধ।